ত্রেতা যুগে অকালবোধন করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। আর কলি কালে? কলির শহর কলকাতায় অকালবোধন করেছিলেন কে, জানেন সে কথা? কী ভাবছেন, এই সময়ে আবার অকালবোধন কীসের?
সবে শেষ হয়েছে পলাশীর যুদ্ধ। হাতের মুঠোয় এসে গিয়েছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা। সামান্য এক কোম্পানির আমলা হয়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে এসেছিলেন ভাগ্য ফেরাতে, সেখান থেকে কিনা একটা বিশাল ভূখণ্ডের ভাগ্যবিধাতা আজ তিনিই! সেদিন পলাশীর যুদ্ধের নায়ক রবার্ট ক্লাইভ বিজয় উৎসব করবেন না তো কে করবে! কিন্তু সে নাহয় পরের কথা। এই বিপুল জয়ের পর তা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করবেন যে, সে উপায়ও নেই। কলকাতা দখলের পর তার একমাত্র গির্জাটাও যে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন সিরাজ-উদ-দৌলা।
আরও শুনুন: দুর্গাপুজোয় চমক দিত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, গয়না-সহ ভাসান হত দেবীর
এই সময়ে, ক্লাইভকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন একজন। নবকৃষ্ণ দেব। তিনিই ক্লাইভকে বুদ্ধিটা দিলেন, নাকি ক্লাইভ তাঁকে প্ররোচিত করলেন তা ঠিক করে বলা মুশকিল, কিন্তু এক ঢিলে দুই পাখি মারার ব্যবস্থা হয়ে গেল। ঠিক হল দুর্গাপুজো করবেন নবকৃষ্ণ। এদিকে তখন তো শরৎকাল! তাতে কী! রাজার ইচ্ছেয় অকালবোধন হল দেবীর। ১৭৫৭ সালেই নিজের নবনির্মিত ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো শুরু করলেন মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব।
আরও শুনুন: ব্যবসায় মন্দা, দুর্গাপুজো করে নাকি বিপুল লাভের মুখ দেখেছিলেন এক ইংরেজ সাহেব
নবকৃষ্ণ ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামান্য মুনশি, সরকারি কাজকর্মের পাশাপাশি ওয়ারেন হেস্টিংসকে ফার্সি ভাষা শেখাতেন। কিন্তু নবাব-ইংরেজের যুদ্ধে তাঁর একেবারে ভাগ্য খুলে গিয়েছে। চার হাজার সওয়ারি, মহারাজ উপাধি, আরও অনেক সুবিধা তাঁকে দুহাত ভরে দিয়েছে ইংরেজ। আর তার চেয়েও বড় কথা, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার কোশাগারের একটা বড় অংশ পড়েছে তাঁর ভাগে। কিন্তু ছোটবেলায় পিতৃহীন, সহায়-সম্বলহীন যুবক হঠাৎ ধনী হয়ে উঠলেও, অভিজাত সমাজে ঠাঁই পাবেন কী করে! এই পুজো সেই রাস্তাও খুলে দিল নবকৃষ্ণ দেবের কাছে।
শুনে নিন রাজা নবকৃষ্ণ দেবের দুর্গাপূজার বাকি গল্প।