পিতৃপক্ষে শ্রাদ্ধ-শান্তি ও তর্পণের রীতি বহুকালের। মনে করা হয়, এদিন পূর্বপুরুষকে জল দান করলে তিনি খুশি হন। সেই কারণেই দেবীপক্ষ শুরুর আগে তর্পণের রীতি। কিন্তু কবে থেকে শুরু হল তর্পণ? কার হাত ধরে?
মহালয়া শব্দের অর্থ হল মহান আলয় বা আশ্রয়। মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করার রীতিই প্রচলিত। আবার এদিনই দেবী দুর্গার চক্ষুদানও হয়। বিশ্বাস করা হয়, যে পিতৃপক্ষে শ্রাদ্ধ-শান্তি ও তর্পণ করলে পূর্বপুরুষেরা খুশি হন এবং আশীর্বাদ করেন। তাঁদের কৃপায় জীবনের অনেক বাধা দূর হয়। জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকেও মুক্তিও মেলে। ফলে পিতৃপক্ষে শ্রাদ্ধ ও তর্পণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এজন্যেই দেবীপক্ষ শুরুর আগে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করা হয়। কিন্তু জানেন কি মহালয়ার সঙ্গে প্রকৃত প্রথম পাণ্ডব কর্ণের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
মহাভারত অনুযায়ী, মৃত্যুর পর মহাবীর কর্ণের আত্মা যায় স্বর্গে। কিন্তু সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হয় সোনাদানা, ধনরত্ন ইত্যাদি৷ কর্ণ তো বেজায় অবাক হন৷ তিনি তৎক্ষণাৎ দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে জানতে চান, ব্যাপারটা কী? আমাকে এইসব অখাদ্য খেতে দেওয়া হচ্ছে কেন? উত্তরে ইন্দ্র জানান, তুমি সারাজীবন সোনাদানা, ধনরত্নই কেবল দান করেছ। পিতৃপুরুষকে জল দাওনি৷ তাই তোমার জন্য এমন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কর্ণ বলেন, এতে আমার দোষটা কোথায়! পিতৃপুরুষের কথা তো জানতে পারলাম কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে৷ মা কুন্তি কিন্তু এসে জানালেন, যে আমি নাকি তাঁরই সন্তান৷ তারপর তো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল৷ এবং আপন ভাই অর্জুনের হাতে মৃত্যুও হল আমার! পিতৃতর্পণের সময়টা আমি পেলাম কোথায়! এবারে দেবরাজ ইন্দ্র বুঝলেন, সত্যিই কর্ণের তেমন দোষ নেই৷ এরপরই তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য স্বর্গত্যাগের অনুমতি দিয়েছিলেন। কেন? যাতে করে এই সময়টায় মর্তে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দান করতে পারেন কর্ণ৷ যেমন কথা তেমন কাজ। ইন্দ্রের কথা মতো মর্তে ফেরেন কর্ণ৷ এক পক্ষকাল অবস্থানও করেন। পিতৃপুরুষকে অন্নজলও দান করেন৷ যার পর জীবিতকালের পাপস্খালন হয় কর্ণের৷
আরও শুনুন: ঠাকুর বলেন, আন্তরিক হলে তবেই ঈশ্বরকে পাবে…
কর্ণ মর্তে যে এক পক্ষকাল অবস্থান করেছিলেন, যে সময় তিনি পিতৃপুরুষকে অন্নজল দান করেছিলেন, তারই নাম হয় পিতৃপক্ষ৷ অর্থাৎ কিনা মহাভারত মতে, কর্ণই পূর্বপুরুষের প্রতি তর্পণ করা প্রথম উত্তরপুরুষ৷