কোথাও কেটে ছড়ে গেলেই আমরা দৌড়ই ব্যান্ড-এইডের খোঁজে। ক্ষতস্থানে একবার লাগিয়ে নিতে পারলেই নিশ্চিন্ত। ধুলো, জল কোনও কিছু থেকেই কোনোরকম ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে না আর। কিন্তু কখনও কি ব্যান্ড-এইড কেনার সময় আদৌ ভেবেছেন, কে আবিষ্কার করেছিলেন এই মহা কাজের জিনিসটি?
রান্নাঘরে কাজ করতে করতে হাত কেটে ফেলা, কি হাতে ছ্যাঁকা খাওয়া প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অধিকাংশ মহিলারাই তাতে পাত্তা দেন না। ক্ষতচিহ্নের উপরেই জমতে থাকে নতুন ক্ষতের দাগ। আর বাড়ির পুরুষেরা, খবরই জানেন না হয়তো সেসব কাটাছেঁড়ার। কিন্তু, যা হয়েই থাকে, সবসময় সেটাই হবে এমন তো কোনও কথা নেই, তাই না? আর ভাগ্যিস সেইসব অন্যরকম ঘটনাও ঘটে যায়। না হলে এই যে গল্পটা বলতে বসেছি, তার জন্মই হত না।
আরও শুনুন: গন্ধ মাংসের মতো, ওজন অন্তত ৫০ কেজি… কোথায় রয়েছে পৃথিবীর এই প্রাচীন ফুল?
সময়টা গত শতকের দ্বিতীয় দশক নাগাদ। জোসেফিন নাইট নামে এক মহিলা থাকতেন আমেরিকার নিউ জার্সিতে। ঘরগেরস্থালির কাজে তিনি বোধহয় বিশেষ পাকাপোক্ত ছিলেন না। ফলে আজ সবজি কাটতে গিয়ে হাত কেটে যায়, তো কাল ফলের খোসা ছাড়াতে গিয়ে চামড়াও সঙ্গে উঠে আসে, এইসব গোলমাল লেগেই থাকে বেচারার। স্বামী আর্ল ডিকসন এদিকে বেশ ভাল মানুষ। বউকে রোজ রোজ আহত দেখতে তাঁর মোটেই ভাল লাগে না। তিনি ভেবে দেখলেন, এর একটা সুরাহা করা দরকার।
ডিকসন চাকরি করতেন আমেরিকার ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসন-এ। কোম্পানির স্টোররুম হাঁটকে তিনি বের করলেন দুটি জিনিস। গজ আর টেপ। তারপর সে দুটোকে জুড়ে ব্যান্ডেজ গোছের একটা জিনিস বানিয়ে ফেললেন। তবে ব্যান্ডেজের চেয়ে আকারে অনেক ছোট। ছোটখাটো কাটাছেঁড়ায় দিব্যি কাজে লাগানো যায়। আর ব্যবহারও করা যায় নিজে নিজেই। ব্যস, জোসেফিন এবার মনের সুখে হাত কাটতে পারেন, কারণ তাঁর হাতের কাছেই হাজির এই আঠা লাগানো ছোট্ট ব্যান্ডেজ।
আরও শুনুন: Safety Pin আবিষ্কারের এই গল্প আপনাকে অবাক করবে
ভাল ব্যাপারটা ঘটল এর পরে। স্ত্রীর বেশ সুবিধা হচ্ছে দেখে ডিকসনের মাথায় একটু ব্যবসাবুদ্ধি খেলে গেল। ভাবলেন, তাঁর স্ত্রী একা নিশ্চয়ই এই সমস্যায় ভোগেন না। তাহলে এই ব্যান্ডেজ মার্কা জিনিসটাকে বাজারে ছাড়লে কেমন হয়? কোম্পানির কর্তা জেমস উড জনসনকে জানালেন এ কথা। দেখেশুনে তাঁরও ব্যাপারটা ভাল লেগে গেল। জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানিতে শুরু হল পরীক্ষানিরীক্ষা, কী করে একে বাজারে বিক্রি করার উপযোগী করে তোলা যায়। অবশেষে ১৯২০ সালে বাজারে ছাড়া হল এই জিনিসটি। ব্যান্ডেজ আর ফার্স্ট এইড মিলিয়ে নাম হল ‘ব্যান্ড-এইড’। মালিকানা রইল জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির হাতে।
একশো বছর পেরিয়ে গেছে তার পর। এখনও ফার্স্ট এইডের মধ্যে ব্যান্ড-এইডের গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। আর তার এই বিশ্বজোড়া নামের পিছনে দায়ী আর কিছুই নয়, এক দম্পতির প্রেম।