অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইতিহাস গড়েছেন স্মৃতি মন্ধানা। ক্রিকেট মানচিত্রে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। কিন্তু দেশের পুরুষ ক্রিকেটারদের সাফল্য নিয়ে যে উন্মাদনা দেখা যায়, তা কি স্মৃতিকে নিয়েও হচ্ছে? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
ক্রিকেট মাঠে অফসাইডের ঈশ্বর কে? যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমীকে এই প্রশ্ন করুন। চোখ বুজিয়ে তিনি উত্তর দেবেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সৌরভের ছায়া যাঁর ব্যাটিংয়ে ধরা পড়ে, তিনি কে? না, তিনি কোনও পুরুষ ক্রিকেটার নন। তিনি ভারতীয় জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের ওপেনার। স্মৃতি মন্ধানা। ওয়াসিম জাফর যথার্থই তাঁর নাম দিয়েছেন, ‘অফসাইডের ঈশ্বরী’। এই অভিধায় তাঁকেই যে ভূষিত করা যায়, স্মৃতি আবার তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। শুধু প্রমাণ করেই দেননি, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পিঙ্ক বল টেস্টে প্রথম মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করে বুঝিয়েও দিয়েছেন কেন এই বিশেষণ তাঁর জন্য সুপ্রযুক্ত।
আরও শুনুন: বিরাটরা আর নাকি ‘ব্যাটসম্যান’ নন! তাহলে কী বলা হবে তাঁদের?
কিন্তু সেই স্মৃতি মন্ধানাকে নিয়ে কি পর্যাপ্ত হইচই হচ্ছে? সোজা কথায় বলতে গেলে, না হচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ঋষভ পান্থের পারফরমেন্স যে হারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, স্মৃতি মন্ধানার জন্য সেই মনোযোগ বরাদ্দ নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি। অথচ ওই একই মাটিতে ২১৬ বল সামলেছেন স্মৃতি। তাঁর ১২৭ রানের ইনিংস সাজানো ২২টি বাউন্ডারি আর একটি ওভার বাউন্ডারিতে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ব্যাট হাতে যে ঔদ্ধত্য দেখানো উচিত, যে শাসন ও নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত, তা তো করেই দেখিয়েছেন স্মৃতি। স্বভাবতই প্রাক্তন ক্রিকেটাররা উচ্ছ্বসিত তাঁকে নিয়ে। ঠিক সেই কারণেই তাঁকে অফসাইডের ঈশ্বরী বলেছেন ওয়াসিম জাফর। এই প্রশংসা তাঁর প্রাপ্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ কথা নিসন্দেহে বলা যায় যে, তাঁর প্রাপ্য বোধহয় আরও বেশি। ভারতীয় পুরুষ দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাফল্য পেলে যে হইচই হয়, সারা দেশ যেরকম সেলিব্রেশন মুডে চলে যায়, এক্ষেত্রেও হয়তো তাই-ই হওয়া উচিত ছিল। উচিত ছিল স্মৃতিকে আরও সম্মান দিয়ে, দেশের জন্য তাঁর ঘাম ঝরানো লড়াইকে স্বীকৃতি দেওয়া। খানিকটা প্রশংসা, খানিকটা প্রচার … এটুকুই তাঁর জন্য বরাদ্দ এখনও পর্যন্ত। কিন্তু কোথায় সেই সোশাল মিডিয়ার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস? কোথায় বা ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা! যা বরাদ্দ থাকে ঋষভ কিংবা ওয়াশিংটন সুন্দরদের জন্য! বিশেষজ্ঞমহলও যেন এক্ষেত্রে বাম হাতেই পুজো সেরেছেন। প্রশংসা যে তাঁরা করেননি তা নয়, কিন্তু আবেগের বন্যায় যে কোথাও ভাটা পড়েছে তা ইতিউতি তাকালেই বোঝা যায়।
বাকি অংশ শুনে নিন।