২ হাজার পরিবারে ৪০০ জোড়া যমজ সন্তান৷ এই সংখ্যা বাড়ছে, কমছে না। গ্রামের মোট জনসংখ্যার 10 শতাংশই যমজ সহদর সহদরা৷ এই কারণেই ভারতের এই গ্রাম পৃথিবীখ্যাত। কিন্তু এমনটা কেন? কারণ কি জিনগত? জল-হাওয়া-মাটির খেলা?
কোডিনহি হল বাস্তবের আরশিনগর। গ্রামের প্রবেশপথেই আছে বড়সড় সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা- “ওয়েলকাম টু দ্য গডস ওন টুইনস ভিলেজ”৷ ব্যাপারটা কী? কোডিনহি আসলে যমজদের গ্রাম৷ একজন দুজন না, ঘরে ঘরে যমজ সন্তান৷ কেরালার মাল্লাপুরম জেলার ব্যাখ্যাতিত অদ্বিতীয় গ্রামের খ্যাতি এই কারণেই৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি যমজের মানুষের দেখা মেলে ‘টুইন ভিলেজ’ কোডিনহিতেই৷ সবচেয়ে বেশি মানে কত?
প্রায় ২ হাজার পরিবারের বসবাস গ্রামে৷ জনসংখ্যা মেরেকেটে ১১ হাজার৷ আশ্চর্যের হল, এই ২ হাজার পরিবারে রয়েছে ৪০০ জোড়া যমজ সন্তান৷ যেখানে ভারতে প্রতি হাজারে যমজের সংখ্যা ৯ জন৷ গোটা পৃথিবীতে আরও কম। প্রতি হাজারে ৪ জন মাত্র। সেখানে কোডিনহিতে প্রতি হাজারে যমজের সংখ্যা হল ৪৫৷ ফলস্বরূপ, গ্রামের স্কুল থেকে খেলার মাঠ, সবখানে চোখে পড়ে যমজ ছোটোবেলা! একটি স্কুলে না-কি ১৫ থেকে ২০ জোড়া যমজ ছাত্রছাত্রী পড়াশুনো করে৷ এতে করে ঝামেলাও হয়। কীরকম ঝামেলা?
আরও শুনুন: রাস্তায় বেরিয়ে আচমকাই ঘুমিয়ে পড়ে মানুষ, আজব এই ঘুমনগরী কোথায় জানেন?
ফুটবল মাঠে কোন দলের কে কাকে পাশ বাড়াল, বোঝা মুশকিল! যমজ খেলোয়াড়দের নিয়ে বিভ্রান্ত হন দর্শকরাও৷ কিন্তু, কবে থেকে? কোডিনহি কি বরাবরের টুইন গ্রাম? না, তা নয়৷ গ্রামবুড়োদের কথায়, এককালে অন্য অঞ্চলের মতোই যমজের সংখ্যা ছিল মোটামুটি স্বাভাবিক৷ কিন্তু গত ৬০ থেকে ৭০ বছরে বেড়েই চলেছে৷ ২০০৮-এ বিষয়টা বহু মানুষের নজরে আসে৷ কারণ, ততদিনে গ্রামে যমজ ভাই-ভাই ও ভাই-বোনের সংখ্যা পৌঁছায় ২৬৪ জোড়ায়৷ এখন?
চারশোর গণ্ডি ডিঙিয়ে পাঁচশোর দিকে দৌড়চ্ছে সংখ্যা৷ জানা গিয়েছে, বর্তমানে প্রতি বছর ১৫ জোড়া যমজ ভূমিষ্ট হচ্ছে কোডিনহিতে৷ অবস্থা এমন যে, গ্রামটির মোট জনসংখ্যার 10 শতাংশই যমজ সহদর অথবা সহদরা৷ এখন প্রশ্ন হল, ভারতের আর পাঁচটি গ্রামের মতোই তো কোডিনহি৷ তবে এখানেই কেন এমন ঘটনা? পুরোটাই কী কাকতালীয়?
আরও শুনুন: এখানে ১২ বছর বয়স হলেই মেয়েরা হয়ে যায় ছেলে, জানেন সেই আজব গ্রামের কথা?
৭০ ছুঁই ছুঁই গ্রামের প্রবীণতম যমজ ভাই-বোন কুনহি ও পাথুটির কথায়, সবটাই ঈশ্বরের আশীর্বাদ৷ বিজ্ঞানীরা তা মানবেন কেন! অতএব, কোডিনহির আশ্চর্য কাণ্ড নিয়ে তাবড় বিজ্ঞানীরা শুরু করেছেন গবেষণা৷ একাধিক প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা৷ যেমন, যমজের জন্মের কারণ কি জিনগত? নাকি আবহাওয়ার খেলা? জল-হাওয়া-মাটির গুণ? উত্তর পেতে যমজদের ডিএনএ-এর নমুনা সংগ্রহ করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা৷
না, উত্তর মেলেনি আজও৷ বরং পৃথিবীর অপর প্রান্তের আরও কয়েকটি ‘কোডিনহি’র খোঁজ মিলেছে। রহস্য বাড়িয়েছে দক্ষিণ ভিয়েতনামের হাঙ লক কমিউন, নাইজেরিয়ার ইগবো-ওরা, ব্রাজিলের ক্যানডিডো গোডো৷ এরাও কোডিনহির মতোই আদর্শ আরশিনগরের উদাহরণ।