জ্ঞানীজনেরা যখন আমাদের সদুপদেশ দেন, তা আমরা শুনে থাকি। সে সব কথা বিভিন্ন জায়গায় লেখাও আছে, যা পড়ে আমরা প্রকৃত সত্য জানতে পারি। কিন্তু এই সবকিছু জানা সত্ত্বেও আমাদের মোহমুক্তি ঘটে না। এই প্রসঙ্গে আমরা শুনে নিতে পারি রাজা সুরথ আর সমাধি বৈশ্যের গল্প।
এককালে সুরথ নামে এক রাজা ছিলেন পৃথিবীর অধিপতি। স্নেহশীল রাজা তাঁর প্রজাদের পুত্রসম স্নেহে পালন করতেন। বেশ ভালোই চলছিল তাঁর রাজপাট। একসময় যবন রাজার সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ বাধে, এবং তিনি পরাজিত হন। এমনকী নিজের রাজধানীতেও তাঁর ঠাঁই হল না, নানা ষড়যন্ত্র, অসাধু চক্রের দৌলতে। শেষমেশ তিনি গভীর অরণ্যে চলে গেলেন। কিন্তু বনে গিয়েও রাজার মন থেকে রাজ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুতেই কাটে না। রাজপাট সব হারিয়েছেন জেনেও সেই নিয়ে নানা চিন্তা তিনি করতে থাকতেন। একদিন এই রাজা সুরথের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল এক বৈশ্যের, তাঁর নাম সমাধি। তিনি ধনবান ছিলেন এককালে। অভিজাত বংশে তাঁর জন্ম। তাঁর স্ত্রী-পুত্রগণ তাঁর সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাঁকে নিঃসম্বল করেছেন। আত্মীয়, বন্ধু কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে তিনি দুঃখিত মনে বনে চলে গিয়েছেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও তিনি পরিবারের চিন্তাই করছেন। অর্থাৎ দূরে থেকেও তাঁর স্ত্রী পুত্র কুশলে আছে কি না, এই চিন্তাই তাঁর মনকে আচ্ছন্ন রেখেছে। অর্থাৎ, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধির সমস্যা একই। দুজনেই জানেন, প্রকৃত সত্য কী। কিন্তু কিছুতেই তাঁরা অতীত জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। তাঁদের মোহ কাটছে না।
আরও শুনুন: Spiritual: কামিনী-কাঞ্চন আঁশচুপড়ির মতো, সাধুসঙ্গেই মেলে ফুলের গন্ধ
দুইজনে তখন গিয়ে উপনীত হলেন মেধা মুনির সমীপে। তাঁকে খুলে বললেন তাঁদের সমস্যার কথা। মুনি শুনলেন সবই। মেধা ঋষি তখন দুইজনকেই শোনালেন তত্ত্বজ্ঞান। বললেন, সংসারে স্থিতিকারিণী মহামায়ার প্রভাবে জীবগণ মোহরূপ গর্তে ও মমতারূপ আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়। মহামায়াই জগতের সকলকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছেন। এই মহামায়া সমগ্র জগৎ সৃষ্টি করেন। তিনি প্রসন্না হলে তবেই মানুষকে মুক্তিলাভের জন্য অভীষ্ট বর প্রদান করেন। রাজা সুরথের কৌতূহল নিবৃত্ত করে মেধা ঋষি আরও বললেন, মহামায় নিত্যা আবার এই জগৎপ্রপঞ্চই তাঁর বিরাট মূর্তি। তিনি সর্বব্যাপী এবং নিত্যা হইলেও তাঁর বহুপ্রকার আবির্ভাবের বৃত্তান্ত আমার নিকট শ্রবণ করুন। এই বলে মেধা ঋষি তাঁদের দুজনকেই দেবীর আবির্ভাবের গল্প শোনান। সেই শ্রবণ শেষ রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি দুজনেই দেবীর স্তব করেন। পরে দুজনেই দুজনের হারানো সবকিছু ফিরে পান।