রাজস্থানমে ডাইনোসোরাস হ্যায় কি নেহি হ্যায়? লালমোহনবাবু আজ যদি এ প্রশ্ন করতেন, তবে ফেলুদা নিশ্চিন্তে বলতেন, নিশ্চিতই ছিল। অন্তত পায়ের চিহ্ন তো তাই-ই বলছে। সম্প্রতি থর মরুভূমিতে পাওয়া গেল তিন ভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসরের পায়ের ছাপ।
সেই কতকাল আগে এই পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত ডাইনোসররা। আজও মিলছে তার প্রমাণ। সম্প্রতি রাজস্থানের থর মরুভূমির উপর পাওয়া গেল ডায়নোসরের পায়ের ছাপ। অতিকায় এই ছাপ ফের বাড়িয়ে দিয়েছে জল্পনা।
যোধুপুরের জয় নারায়ণ ব্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বীরেন্দ্র সিং পারিহার এই পায়ের ছাপ আবিষ্কার করেছেন। তাঁর মতে, এই ছাপ প্রায় ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি বছরের পুরনো। সবথেকে বড় যে দুটি ছাপ পাওয়া গিয়েছে সেটি প্রায় ৩৫ সেমির, আর অন্যটি ৫.৫ সেমির। এই পায়ের ছাপ বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, অত বছর আগে নিশ্চিত এই অঞ্চলের মাটি অনেকটাই নরম ছিল। যার উপরই পড়েছিল এই ছাপ। বহুকাল ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন সেটি প্রস্তরীভূত হয়ে গিয়েছে।
আরও শুনুন: মুছে গেল ইতিহাস, জালিয়ানওয়ালা বাগ-এর নয়া রূপ নিয়ে ক্ষুব্ধ ইতিহাসবিদরা
কেমন ছিল সেই ডায়নোসররা? আপাতত পায়ের ছাপ থেকে যেমনটা অনুমান করা হচ্ছে, সেই অনুযায়ী, বেশ অতিকায় ছিল এই প্রাণীরা। লম্বায় অন্তত ১২ থেকে ১৫ মিটার ছিল প্রাণীগুলি। ওজন হতে পারে ৫০০ থেকে ৭০০ কেজির মধ্যে। আর উচ্চতায় অন্তত এক মানুষ সমান। মোটামুটি এই পরিসংখ্যান থেকেই আন্দাজ করা যায় ঠিক কতটা অতিকায় ছিল সে যুগের ডায়নোসর।
আরও শুনুন: ‘আপত্তিজনক’ ছবিতে হিন্দু দেব-দেবীর ‘অপমান’, অভিযোগে ‘কামসূত্র’-এ আগুন বজরং দলের সদস্যদের
এমন বিরাট প্রাণী কী করে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে গেল তা নিয়ে আজও গবেষণা চলছে। ভিন্ন সময়ে নানা মত উঠে আসে, যা জানায় এই অতিকায় প্রাণীর অবলুপ্তির কারণ। নতুন করে খুঁজে পাওয়া এই পায়ের ছাপ সেই গবেষণাতেও আলো ফেলবে। অনুমান করা হচ্ছে, যে সময় ডায়নোসররা ওই এলাকায় ঘুরে বেড়াত, সেই সময় জলবায়ু ছিল অন্যরকম। তাই বিভিন্ন প্রজাতির ডায়নোসরের কাছে প্রিয় ছিল এই এলাকা। ছিল বিচরণ ক্ষেত্র। কিন্তু কালক্রমে জলবায়ুর পরিবর্তন যে হয়েছে, তা স্পষ্ট। সি-লেভেল বা সমুদ্রপৃষ্ঠেরও যে বহুবার পরিবর্তন হয়েছে, তাও এর থেকে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডায়নোসর নিয়ে তো বটেই, জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়েও নয়া দিক খুলে দিয়েছে এই আবিষ্কার। বীরেন্দ্র সিং পারিহার বলছেন, শুধু এই তিনটি পায়ের ছাপই নয়, কচ্ছ এলাকায় ডায়নোসরদের আরও নমুনা বা ফসিল খুঁজে পাওয়া যাবে বলেই তাঁর বিশ্বাস। তা যদি হয়, তাহলে কোটি কোটি বছর আগে ডায়নোসরদের পৃথিবী সম্পর্কে বর্তমান সময়ের মানুষ যে অনেক কিছুই জানতে পারবে, তা বলাই যায়।