কাবুলে মার্কিন বাহিনীর উপর হামলার পরই নড়েচড়ে বসেছে বাইডেন প্রসাশন। হামলাকারীদের রেয়াত করা হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে কি আফগানভূমে আবার নামতে চলেছে মার্কিন সেনা? নাকি নানা দেশের সমীকরণ মিলিয়ে ঘনিয়ে উঠেছে যুদ্ধের সম্ভাবনা?
‘বদলা চাই। কোনওভাবেই অপরাধীদের ক্ষমা করব না।’ কাবুলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে মার্কিন সেনা-নাগরিকের মৃত্যুর পরই গর্জে উঠলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসলামিক স্টেট জঙ্গিগোষ্ঠী বা ISIS-কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বললেন, “কোনও ক্ষমা নেই। যেখানেই থাকুক এক-একজন অপরাধীকে খুঁজে খুঁজে মারব।”
বৃহস্পতিবার রাতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মূলত বিমানবন্দরে চত্বরে জোরালো বিস্ফোরণ হয়। সেই সময় তালিবান অধিকৃত আফগানিস্তান ছাড়তে চাওয়া কয়েক হাজার আফগান নাগরিক জড়ো হয়েছিলেন বিমানবন্দরে। আফগান নাগরিকদের নিয়ে মার্কিন বিমান ওড়ার আগেই পরপর বিস্ফোরণ ঘটে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বিস্ফোরণে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন মার্কিন সেনা জওয়ান রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও শুনুন: Operation Devi Shakti: মাতৃশক্তির বলে বলীয়ান হয়েই কাবুল থেকে বিপর্যস্তদের উদ্ধার ভারতীয় সেনার
হামলার দায় স্বীকার করেছে আইসিস (খোরাসান)। প্রথম বিস্ফোরণের খবর আসার পরই আমেরিকার কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত হয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনা আধিকারিক ও অন্যান্য সরকারি কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সারেন তিনি। তার পরই সাফ জানান, “সন্ত্রাসবাদী শক্তির কাছে মাথা নত করবে না আমেরিকা। অসহায় আফগান নাগরিক ও আফগানিস্তানে আটকে পড়ে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারকার্য চলবে। তালিবানের দেওয়া ডেডলাইন ৩১ আগস্ট আসতে এখনও সময় রয়েছে। তার আগে অবধি কোনও শক্তিই এই উদ্ধারকার্য বন্ধ করতে পারবে না।”
এরপরই আইসিসকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বললেন, “যারা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত। কিংবা যারা আমেরিকার অনিষ্ট চাইছে, কাউকে রেয়াত করা হবে না। খুঁজে খুঁজে মারব তাদের। এর মূল্য চোকাতেই হবে।” মার্কিন প্রেসিডেন্টের এহেন হুঁশিয়ারি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আর এই হুমকির পরেই মার্কিন পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে নানা মহলে। দোহায় শান্তিচুক্তির আড়ালে কার্যত তালিবানের শাসন মেনেই নিইয়েছিল আমেরিকা। যুদ্ধজর্জর দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর আসবে না বলেই মনে করেছে মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু সমস্ত সমীকরণ পালটে গেল কাবুল বিস্ফোরণে। তবে কি ফের আফগানভূমে সেনা নামাতে চলেছে মার্কিন প্রশাসন? মার্কিন সেনাবাহিনীর অপসারণের পরই প্রায় রাতারাতি আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবান। তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি মার্কিন প্রশাসন। বরং দোষ চাপিয়েছিল ‘যুদ্ধে অক্ষম’ আফগান সেনার ঘাড়ে। মার্কিন সেনাদের ফেলে আসা বহু অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র তালিবানদের কবজায় চলেও গিয়েছে। ইতিমধ্যে তালিবানরা আর কেবল জঙ্গিগোষ্ঠী হয়ে থাকেনি, যুদ্ধবিদ্যায় যথেষ্ট পারদর্শী হইয়েও উঠেছে। সব মলিয়ে তালিবানরা এখন যে সুশিক্ষিত সেনার থেকে কম কিছু নয়, তা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট। মার্কিন সেনাবাহিনীর উপর হামলা স্পষ্টই প্রমাণ দিচ্ছে যে, তালিবানদের মনোভাবে কোনওরকম বদল আসেনি।
আরও শুনুন: ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে তালিবান, ভয়ে ঘরছাড়া আফগানিস্তানের Little Messi
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা কি সরাসরি যুদ্ধের পথে যাবে? তালিবানদের দখল নেওয়ার পর থেকে এমনিতেই সারা বিশ্বে সমালোচিত বাইডেন প্রশাসন। বাইডেন সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মূলত সেনাখরচ কমিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে। আফগানিস্তানে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তাঁদের লক্ষ্য ছিল না। আল কায়েদার হামলার বদলা নেওয়ার যে প্রয়োজন তাঁদের ছিল, তা এতদিনে ফুরিয়েছে। আফিম চাষের টাকাও সেই অর্থে জমা পড়ছিল না মার্কিন মদতপুষ্ট সরকারের কোষাগারে। ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আফগান্তিস্তান থেকে সরে গিয়েছিল মার্কিন সেনা। ধীরে ধীরে সমস্ত মার্কিন ও আতঙ্কিত আফগান নাগরিককে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজও চলছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে জঙ্গিহামলা, আবার যুদ্ধ পরিস্থিতি উসকে দিল বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।