অশান্ত আফগানিস্তান। প্রতি মুহূর্তে সেখানে পট বদলাচ্ছে রাজনীতির। বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ। চিন্তিত সারা বিশ্বই। আর এসবই হচ্ছে নাকি গান্ধারীর অভিশাপে। শকুনিকে দেওয়া তাঁর অভিশাপের বেড়াজাল নাকি আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি আফগানিস্তান। নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এই মত। কিন্তু এই তথ্য বা মত কতটা সত্যি? জানাচ্ছেন নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ী।
তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান। দু-দশকের অর্জিত শান্তি ও স্থিতি এক লহমায় মিলিয়ে গিয়েছে। প্রায় যুদ্ধ পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে আছে এই দেশ। আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের রাজনীতিই এই মুহূর্তে দোলাচলে। নানা সম্পর্কের সমীকরণ প্রতি মুহূর্তে রং পালটাচ্ছে। এই অশান্তিকে কেন্দ্র করে আগামী পৃথিবীর ভবিষ্যৎ যে কী হবে, তা এই মুহূর্তে স্পষ্ট করে কেউই যেন অনুমান করতে পারছেন না।
আরও শুনুন: সিলেবাস থেকে বাদ মহাশ্বেতা দেবীর গল্প, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে বিতর্ক
এহেন পরিস্থিতিতেই নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল একটি তথ্য। যা মহাভারতকেন্দ্রিক। তথ্যটি এরকম যে, আফগানিস্তানে বর্তমান এই অশান্তিরর অতীত প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে সেই মহাভারতের আমলেই। শেষ হয়েছে কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধ। জয়ী হয়েছেন যুধিষ্টির। ধ্বংস হয়েছে কৌরব বংশ। এই পরিস্থিতিতে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন গান্ধারী। তিনি এই বিনাশের জন্য কৃষ্ণ ও অন্যান্যদের সঙ্গেই শকুনিকেও দায়ী করেন। এবং সেই সঙ্গে শকুনিকে এই বলে অভিশাপ দেন যে, যেহেতু তাঁর কারণেই গান্ধারীর শতপুত্রের মৃত্যু হয়েছে, তাই গান্ধার রাজ্যে অর্থাৎ শকুনির রাজ্যে কখনও শান্তি থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে টুইট করেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায়ও। এই অভিশাপের কথা জানিয়ে তিনি আরও লেখেন, “হাজার হাজার বছর ধরে অভিশাপের বেড়াজালে আটকে থাকা সে দিনের গান্ধার আজকের আফগানিস্তান।
আরও শুনুন: Operation Devi Shakti: মাতৃশক্তির বলে বলীয়ান হয়েই কাবুল থেকে বিপর্যস্তদের উদ্ধার ভারতীয় সেনার
আজও একটু শান্তির খোঁজে গান্ধারীর গান্ধার দেশের মানুষ… ৫০০০ বছর আগের অভিশাপ আজও যেন জ্বলন্ত সত্যতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে।” তাঁর টুইটের সূত্র ধরেই নেটদুনিয়ায় এই তথ্য ও মত হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এই সত্যি যে, আফগানিস্তানের বর্তমান এই পরিস্থিতির নেপথ্যে রয়ে গিয়েছে গান্ধারীর সেদিনের ক্রোধ ও অভিশাপ।
এ কথা সত্যি যে, আফগানিস্তানের সঙ্গে বৈদিক সভ্যতার সম্পর্ক সুপ্রাচীন। ঋগ্বেদের প্রথমাংশ লেখা হয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তানেই। সেই সম্পর্কের সত্যতা থাকলেও, গান্ধারীর এই অভিশাপ কতটা সত্যি? এ বিষয়ে পুরাণ-বিশেষজ্ঞ নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, “মূল মহাভারতে অর্থাৎ সংস্কৃতে ব্যাসদেব রচিত যে মহাভারত, সেখানে এরকম কোনও উল্লেখ নেই। মহাভারত এমন গ্রন্থ নয় যে, সেখানে এরকম একটা কথা থাকবে। এই বিষয়টি সবার আগে আমাদের অনুধাবন করতে হবে।” তাহলে গান্ধারীর এই অভিশাপের কথা ছড়িয়ে পড়ল কীভাবে? তিনি বলেন, “লৌকিক লেখক যাঁরা, তাঁদের তৈরি গল্প এটা হতে পারে। ব্যাসদেবের মহাভারতে এর চিহ্ন নেই।”
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।