মাছেরাও নেশা করে! শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনা কিন্তু সত্যি। অন্তত বিজ্ঞানীরা তাই-ই বলছেন। কিন্তু কীভাবে নেশাড়ু হয়ে ওঠে মাছেরা? সেই কথা শুনে নিন।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে চূড়ান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য। নোনা জল বা সমুদ্রে বেড়ে ওঠা এবং বেঁচে থাকা মাছেদের মধ্যে ক্রমশ তৈরি হচ্ছে নেশার প্রবণতা। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন, নেশা হচ্ছে মাছেদেরও।
আরও শুনুন: Dinosaur : পৃথিবী থেকে যে যে কারণে হারিয়ে গেল ডায়নোসর…
বিজ্ঞানীরা বলবেন, মাছেরা আসলে মেথামফেটামাইন্-এ আক্রান্ত। সহজ করে বলতে গেলে সমুদ্রের জলে মিশছে নানা ধরণের নিষিদ্ধ মাদক। সেই সঙ্গে অশোধিত খনিজ তেল, প্লাস্টিক, আরও নানা কিছু। সেগুলি ক্রমেই বিপন্ন করছে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র। মানুষ যেসব ড্রাগ নিয়ে নেশা করে সেসব চোরাচালান এবং পাচারের সময়ে, সমুদ্রের জলে মিশছে। আর তাতেই মাছেরা ক্রমশ আক্রান্ত হচ্ছে নেশায়। এর আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, প্রোজাক নামে একটি ড্রাগের কারণে, মাছেদের আচরণে খুব দ্রুত বদল হচ্ছে। এছাড়াও জলে মিশছে নানা রকমের বেআইনি ড্রাগ, এগুলোর ফলেই বদলে যাচ্ছে মাছেদের স্বাভাবিক আচরণ। কিন্তু সমুদ্রের এত বিপুল জলে কতটুকুই বা মিশছে ড্রাগ, যাতে এমন সমস্যা হচ্ছে? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রতি এক হাজার লিটার জলে মাত্র এক মাইক্রোগ্রাম মেথামফেটামাইন্ মিশলেও সেটা স্বচ্ছ জলের মাছেদের জন্যও হয়ে উঠছে চূড়ান্ত ক্ষতিকারক।
আরও শুনুন: Beer-এ থইথই London, আশ্চর্য এই বন্যার ঘটনা জানেন তো?
গবেষকরা কিছু মাছ ধরে এনে, একেবারে স্বচ্ছ জলে দশ দিন এবং ড্রাগ মেশানো জলে দশদিন করে রেখে দেখেছিলেন। স্বচ্ছ জলে থাকা মাছেরা বেশি অস্বস্তিতে পড়ছিল। বরং ড্রাগ মেশানো জলে তারা ভালো থাকত। স্বচ্ছ জলে তাদের দেখা দিয়েছিল, ‘উইথড্রল সিন্ড্রোম’। এরকমও দেখা গিয়েছে যে ড্রাগ মেশানো জলে দুই মাস থাকার পর, তারা এতই নেশাতুর হয়ে গিয়েছিল, প্রথম চারদিন স্বচ্ছ জলে থাকতে তাদের রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছিল। তারা সারাদিনে বিশেষ নড়াচড়া অবধি করত না।
এছাড়া আরও একটি আশঙ্কার খবর, আগামী চব্বিশ বছরের মধ্যে সমুদ্র থেকে বিলুপ্ত হতে পারে সামুদ্রিক মাছের প্রজাতিগুলি। চূড়ান্ত দূষণ, মাছেদের বাস্তুতন্ত্র বিরোধী পরিবেশ, আবহাওয়া পরিবর্তন, নির্বিচারে মাছ ধরা ইত্যাদি কারণে লুপ্ত হয়ে যেতে পারে নোনা জলের মাছেদের ঝাঁক। দূষণের কারণে যে হারে মাছেদের প্রজনন কমছে, সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র যেভাবে ভেঙে পড়ছে, প্রায় নব্বই শতাংশ সামুদ্রিক মাছ এগোচ্ছে, বিলুপ্তির পথে। সামুদ্রিক মাছের ভূমিকা শুধুই খাওয়ার পাতে সীমাবদ্ধ তা কিন্তু একেবারেই নয়। তারা সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করে, শুষে নেয় জলের বেশীরভাগ বিষাক্ত পদার্থ। বিজ্ঞানীরা প্রায় বত্রিশরকম আলাদা আলাদা সামুদ্রিক পরিবেশে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানিয়েছেন, যেভাবে অত্যাধিক জনসংখ্যা এবং দূষণ বাড়ছে, এরকম চলতে থাকলে, সামুদ্রিক মাছের বিলুপ্তি স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, সমুদ্র মাছশূন্য হয়ে যাওয়া মানে, মানব সভ্যতাকেও ধ্বংসের দিকে কয়েক পা এগিয়ে দেওয়া। তবে এখনও খানিক সচেতন হলে, উদ্যোগ নিয়ে সমুদ্রের দূষণ কমালে, প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ কমালে, সামুদ্রিক প্রাণীদের হয়ত খানিক রক্ষা করা যেতে পারে।