বিদ্যার মাধ্যমে জীব যখন তার জীবন থেকে অবিদ্যাজনিত ভেদজ্ঞান দূর করে, দেহসম্বন্ধ ছিন্ন করতে সক্ষম হয়, তখন নিজেকে সে ব্রহ্ম অভিন্ন মনে করে। নিজেকে ব্রহ্ম বলে জানাই জীবের মুক্তি। শোনাচ্ছেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
অদ্বৈতমতে জীবের বন্ধন এবং মুক্তির অর্থ হল– আত্ম বিস্মরণ এবং আত্মস্বরূপকে উপলব্ধি করা।
এই বিষয়ে পুরাণে একটি গল্পের উল্লেখ রয়েছে। সেটি শুনে নেওয়া যাক।
এক গর্ভবতী সিংহী একদল মেষশাবককে তাড়া করছিল। তাড়া করার ক্ষিপ্রতায় তাল সামলাতে না পেরে পাহাড় থেকে নীচে পড়ে তার মৃত্যু হল। কিন্তু তার আগে সেখানে তার গর্ভ থেকে জন্ম নিল এক সিংহশাবক। সিংহশাবক জন্ম থেকেই আশ্রয় নিল, মেষশাবকদের দলে। সর্বক্ষণ মেষশাবকদের সঙ্গে থাকতে থাকতে, অনুসরণে, তার প্রকৃতিও ক্রমশ হয়ে উঠল মেষশাবকদের মতোই। সিংহের হুংকার সে জীবনেও শেখেনি, তাই সে জানেই না। সে মেষশাবকদের মতো করে ডাকতে শিখলো।
একেই বলে জীবের আত্ম-বিস্মরণ।
আরও শুনুন: Spiritual : মন থেকে চঞ্চলতা দূর করে নিজেকে পবিত্র ও সংযত করবেন কীভাবে?
এইভাবে দিন কাটছিল। একদিন এই মেষের পালকে তাড়া করল অন্য এক সিংহ। অন্যান্য মেষশাবকের মধ্যে সিংহশাবকও প্রাণভয়ে দৌড়তে শুরু করল। মেষশাবকের পালের মধ্যে সিংহশাবককে দেখে, আর-এক সিংহশাবক তাকে তার প্রকৃত স্বরূপ বুঝিয়ে দিল। বলল, তুমি এদের সঙ্গে পালাচ্ছ কেন! তোমার কাজ আক্রমণ করা, রুখে দাঁড়ানো। তা না করে, তুমি এদের মতো ভয়ে পালাচ্ছ! আর কি ব্যা ম্যা করে ডাক পাড়ছ! তুমি সিংহশাবক। বনের রাজা। গর্জন করলে বন কেঁপে উঠবে গর্জন করো। সিংহশাবক তো গর্জন করতে জানেই না । অনেক কষ্টে সে গর্জন করতে পারল। এ যেন গুরুর থেকে ‘তত্ত্বমসি’ শিক্ষালাভ। গুরুর থেকে তত্ত্বমসি শিক্ষায় জীবের আত্মসাক্ষাৎ বা ব্রহ্মস্বরূপ উপলব্ধি হয়। এরই অপর নাম ব্রহ্মোপলব্ধি। তাই বেদ-বেদান্তে বারংবার উচ্চারিত হয়েছে- ‘আত্মানং বিদ্ধি’ অর্থাৎ, আত্মা বা নিজেকে জানো।
আরও শুনুন: Spiritual: দানের কথা বলেন মহাপুরুষগণ, কীরকম দানে পুণ্য লাভ হয়?
উপনিষদানুসারী দর্শন শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসনের মাধ্যমেই জীবের বন্ধনদশা দূর হয় এবং জীব মোক্ষলাভ করে। এজন্য শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসনকেই মোক্ষলাভের উপায় বলা হয়। নিদিধ্যাসনের অর্থ, শ্রুত বিষয়ের মনন, নিরন্তর পর্যালোচনা এবং ধ্যান।
বাকি অংশ শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।