মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তর্কটা। ব্রিটিশদের প্রশংসা করতেই কি ‘জনগণমন’ লিখলেন রবি ঠাকুর? আর সেটিই পরে গণ্য হল আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে। এ তর্কের মীমাংসা অবশ্য বহু আগেই হয়েছে। আসুন, আর একবার শুনে নিই।
জনগণমন অধিনায়ক জয় হে… এই শব্দ উচ্চারিত হলে আসমুদ্র হিমাচল ভারতবাসী শিহরিত হয়। পৃথিবীর যে প্রান্তেই বেজে উঠুক এই সুর, ভারতবাসীর রক্তে জেগে ওঠে তার দেশের মাটি। মনে মনে এই গানেই যেন সে দেশের মাটির পরে ঠেকায় মাথা। এই গানেই সে দেখে বিশ্বময়ীর, বিশ্বমায়ের আঁচল মাতা।অথচ তাই নিয়েই তর্কের শেষ নেই। কেউ কেউ বলেন, এ গান নাকি লেখা হয়েছে পঞ্চম জর্জের বন্দনা করে। এখানে উল্লিখিত জনগণমন অধিনায়ক নাকি আসলে ইংরেজ শাসক।
আরও শুনুন – পুলিশের মারে মৃতপ্রায়, জ্ঞান ফিরতেই কিশোরের মুখে ‘বন্দে মাতরম’
খটকা লাগে! রবি ঠাকুর কি সত্যিই গান লিখবেন ব্রিটিশ বন্দনা করে! যে রবীন্দ্রনাথ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে, লিখেছিলেন বাঙালির জাগরণগীতি, জালিয়ানওয়ালাবাগের পর যিনি ঘৃণায় ত্যাগ করেছিলেন নাইট উপাধি– সেই রবীন্দ্রনাথ লিখবেন ব্রিটিশবন্দনা!
খোদ কবিও শুনেছিলেন এ কথা। বেদনার্ত হয়েছিলেন। পুলিনবিহারী সেনকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, ‘যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথ পরিচায়ক, সেই যুগ যুগান্তরের মানবভাগ্য-রথচালক যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ বা কোনো জর্জই কোনোক্রমেই হতে পারেন না।’
কবির নিজের এই কথার পরেও যাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা যে বিশেষ উদ্দেশ্যেই প্রশ্ন করেন, তা সহজেই বোঝা যায়।
এ প্রসঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা আমাদের জানিয়েছেন শ্রদ্ধেয় কবি শঙ্খ ঘোষ। সত্যি সত্যিই ব্রিটিশ বন্দনার সে গল্প। পঞ্চম জর্জের রাজত্বের ২৫ বছর উপলক্ষে একটি সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সম্পাদনার ভার ছিল কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাসের উপর। সেখানে লিখেছিলেন সংস্কৃতি জগতের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ? সংকলনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রায় প্রত্যেকেই কবির পরিচিত। তবু জানা যায়, কবির থেকে কেউ নাকি লেখা আদায় করতে পারেননি। কবির নাকি বেজায় শরীর খারাপ।
কিন্তু শরীরের কষ্টকে কবে আর গুরুত্ব দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ! এ যুক্তি তাই ততটা গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। শঙ্খবাবু অনুসন্ধান করে জানান, প্রায় সমসময়ে, রবীন্দ্রনাথ বিস্তর লেখালিখি করেছেন। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়কে চিঠিতে লিখেছেন – দেহ না চলিলেও মন চলে, এবং মন চলিলে দেহকে যাইতেই হয়।
বাকিটা শুনুন প্লে-বাটন ক্লিক করে।