উপনিষদের অনুযায়ী, সকল শব্দের আদিতে রয়েছে ওঁ। যাবতীয় ধ্বনি এবং শব্দের মধ্যে পরিব্যাপ্ত ওঁ। যে কোনও অংশকে যেরকম শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায়, সত্তার সামগ্রিক রূপ প্রকাশ হয় ওঁ ধ্বনি দিয়ে। ওঁ সকল শব্দের উৎস, আবাস এবং অবলম্বন। ওঁ আসলে ব্রহ্মের শব্দরূপ। ওঁ মন্ত্র জপের ফলে আত্ম-জ্ঞান-অগ্নি প্রজ্বলিত হয়।
ওঁ বা ওঁ-কার তৈরি হয়েছে অ+উ+ম্ এই তিন ধ্বনি ত্রয়ের সংযুক্তিতে। একে বলা হয় ‘প্রণব’ বা ত্র্যক্ষর। শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের নয়, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মেও পবিত্রতম প্রতীক এই ওঁ। স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ওঁ-কার “সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক, ঈশ্বরেরও প্রতীক।” রামকৃষ্ণ পরমহংসের মতে, “…ওঁ হইতে ‘ওঁ শিব’, ‘ওঁ কালী’, ‘ওঁ কৃষ্ণ হয়েছেন।”
ওঁ বিষয়ে আরও একটি মত রয়েছে। ঈশ্বরের তিনটি কর্ম সৃষ্টি, স্থিতি এবং লয়। এই তিন কাজের জন্য জগত প্রতিপালক রূপে রয়েছে তিন দেবতা এঁদেরকে একত্রে বলা হয় ত্রিদেব। এঁরা হলেন, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, স্থিতি বা জগত প্রতিপালক ভগবান বিষ্ণু, লয় বা বিনাশের দেবতা দেবাদিদেব মহাদেব।
ওঁ- অ উ ম্, এই তিন বর্ণ এই তিন দেবতার সূচক।
আরও শুনুন – Spiritual: শিবলিঙ্গের উৎপত্তি কোথা থেকে? এর অর্থ কী?
অ- ব্রহ্মা
উ- বিষ্ণু
ম্- শঙ্কর
অন্য এক মতে, ‘অ-কার’ ‘আদিমত্ত্ব’ অর্থাৎ প্রারম্ভের প্রতীক। ‘উ-কার’ ‘অভেদত্ব’-এর প্রতীক। ‘ম-কার’ ‘অপীতি’ অর্থাৎ লয়ের প্রতীক।
উপনিষদ বলে ওঁ মন্ত্র জপের সময় সাধকের চিন্তা পালটে ফেলা জরুরি। তাঁকে মনে করতে হবে তাঁর দেহের অন্তরাত্মা হচ্ছেন কাঠের মধ্যে নিহিত তাপের লীন শক্তির মতো। ওঁ ধ্বনিকে প্রতিটি চিন্তা এবং আবেগের মধ্যে দিয়ে ধাবিত করলে মানুষের চিন্তা এবং আবেগ হয়ে ওঠে শুদ্ধতর। ওঁ এর মধ্যে নিহিত আধ্যাত্মিক শক্তি দেহ এবং মনের প্রতিটি অংশের রূপান্তরের সাক্ষী হয়ে ওঠে। ওঁ ধ্বনির স্তব করলে দেহকন্দর মধ্যের আত্মা সুপ্ত থেকে ক্রমশ জাগ্রত হয়, এই জাগরণের আরেক নাম জ্ঞানাগ্নি।
আরও শুনুন: Spiritual: গুরুপূর্ণিমার প্রচলন হল কীভাবে?
প্রাচীন ভারতে দৈনন্দিন জীবনে ওঁ কে নানাভাবে ব্যবহৃত করতে দেখা গেছে। এই অনুশীলন সকল কর্মকে আধ্যাত্মিকতায় আরোপিত করত। তৈত্তিরীয় উপনিষদ্ বলে, ওঁ শব্দটিকে ব্রহ্মরূপে উপাসনা করবে। “ওঁ দেবগণকে মন্ত্র শ্রবণ করাও”- এই কথা বললে ঋত্বিকগণ শ্রবণ করিয়ে থাকেন। ওঁ উচ্চারণপূর্বক সামসমূহ গান করিয়া থাকেন। ‘ওঁ শোম্’- এই বলে শস্ত্রনামক স্ত্রোত্রসমূহ পাঠ করেন। ওঁ উচ্চারণ করে ব্রহ্মা অনুজ্ঞা প্রকাশ করেন। ওঁ বলে অগ্নিহোত্র অনুমতি প্রদান করা হয়। ওঁ শব্দটি সম্মতিজ্ঞাপক রূপেও প্রসিদ্ধ। তৈত্তিরীয় উপনিষদ্ আরও বলা রয়েছে,
ওমিতি ব্রাহ্মণঃ প্রবক্ষ্যন্নাহ ব্রহ্মোপআপ্নবানীতি। ব্রহ্মৈবপাপ্নোতি।
বেদ বা ব্রহ্ম লাভ করব মনে করে বেদপাঠক বা ব্রহ্মজিজ্ঞাসু যদি ওঁ উচ্চারণ করেন, সে কারণে তিনি অবশ্যই বেদ বা ব্রহ্ম লাভ করেন।
আরও শুনুন – Spiritual: দেহের মৃত্যু হলে আত্মাও কি বিনষ্ট হয়?
মন্ত্র জপের সময় ওঁ ধ্বনিকে নিয়ে নিবিষ্ট চিত্তে স্মরণ করতে হয়। মনে করতে হয় দেহের প্রতিটি স্নায়ু, ধমনী, পেশী, শ্বাস, কোষে ওঁ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।