বাঙালি বধূ, পরনে শাড়ি। কিন্তু চেহারায় খাঁটি ইউরোপীয়। চোখের মণি নীল। চোস্ত ইংরেজি, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, হিন্দি, বাংলাতেও। তিনি ছিলেন একনায়ক হিটলারের অন্ধভক্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অক্ষশক্তির হয়ে করেছেন গুপ্তচরবৃত্তি। কে তিনি? শুনে নিন তাঁর কাহিনি।
আসল নাম ম্যাক্সিমিয়ানি জুলিয়া পোর্টাস। কিন্তু ইতিহাস তাঁকে মনে রেখেছে, সাবিত্রী দেবী নামে। নিজেকে মনে করতেন ধর্মচ্যুত আর্য। জন্মেছিলেন ফ্রান্সে। মা ছিলেন ইংরেজ। বাবা ছিলেন গ্রীক-ইতালিয়ান। তাই জুলিয়ার রক্তে মিশে ছিল গ্রিক ঐতিহ্য আর ব্রিটিশ আভিজাত্য। কিশোরী বয়স থেকেই গ্রীক জাতীয়তাবাদের প্রতি তৈরি হয় ঝোঁক। পড়াশোনা করেন দর্শন বিষয়ে। সেই বিষয়েই স্নাতক, স্নাতকত্তোর ডক্টরেট হন। সেই সময়ে পরিচিত হন স্বস্তিকার সঙ্গে। এই স্বস্তিকা আর্যদের অতি পবিত্র-চিহ্ন। সে বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে খোঁজ পান জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ হেনরিখ শ্লিমানের। ট্রয় যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি নাকি প্রায় দু হাজার জায়গায় স্বস্তিকা চিহ্ন আবিষ্কার করেছিলেন। শ্লিমান ঘোষণা করেছিলেন প্রাচীন আর্য সভ্যতা থেকেই গ্রিক সভ্যতার উন্মেষ এবং বিস্তার।
আরও পড়ুন – আমেরিকার রাষ্ট্রপতির জন্যই জন্ম টেডি বিয়ারের, কীভাবে জানেন?
স্বস্তিকার প্রতি তীব্র আকর্ষণ জুলিয়াকে আকৃষ্ট করে নাজিবাদের প্রতি। জেরুজালেমে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার নানা ইতিহাস এবং নিদর্শন দেখে তাঁর মনে জন্ম নেয় তীব্র প্রবল ইহুদী-বিদ্বেষ। ঠিক একই সময়, জার্মানিতে প্রবল বেগে উত্থান হচ্ছে ফ্যুয়েরার অর্থাৎ অ্যাডলফ্ হিটলারের। তাঁরা স্বস্তিকা চিহ্নকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলছেন বিশুদ্ধ রক্ত এবং সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদ। সেইসঙ্গে বাতাসে ছড়াচ্ছে তীব্র ইহুদী বিদ্বেষ।
তিনের দশকে আর্য সংস্কৃতিকে আরও নিবিড়ভাবে বুঝতে জুলিয়া আসেন ভারতে। গ্রহণ করেন হিন্দু ধর্ম। নিজের জন্মগত নাম পরিবর্তন করে নাম নেন, সাবিত্রী দেবী। এই সময় তিনি কাজ শুরু করেন, একটি হিন্দু মিশনের হয়ে। শিখতে শুরু করেন, হিন্দি এবং বাংলা ভাষা। নিরামিষ ছাড়া মুখে তুলতেন না কিছুই। তিনের দশকেই কিন্তু তিনি ব্রিটিশ শক্তির সমস্ত তথ্য জোগাড় করে পাচার করতেন অক্ষশক্তির কাছে। চরবৃত্তি করতেন ইটালি-জার্মানি-জাপানের হয়ে। দাবি করতেন, তাঁরই মধ্যস্থতায়, ওই সময়ে, সুভাষচন্দ্র বসু দেখা করেছিলেন, জাপান সম্রাটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। যদিও এই ঘটনার সত্যতা বিষয়ে বিশেষ কিছু প্রমাণ মেলে না।
আরও পড়ুন – ইন্দোনেশিয়ায় সমুদ্রের অতলে ঘুমিয়ে হিন্দু দেবদেবীর প্রাচীন মূর্তি! ব্যাপারটা কী?
চারের দশকে তিনি নাজিবাদের প্রবল সমর্থক ‘নিউ-মার্কারি’ সংবাদপত্রের সম্পাদক বাঙালি অসিতকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আবদ্ধ হন বিবাহ বন্ধনে। অসিতকৃষ্ণ ছিলেন হিটলারের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। এই সময়ে তাঁরা বসবাস করতে শুরু করেন কলকাতায়। সেই সময় অক্ষশক্তির সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে এই দম্পতির ছিল বিপুল ঘনিষ্ঠতা। হিটলারকে অতীব শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন সাবিত্রী। তিনি মনে করতেন, হিটলার, ভগবান বিষ্ণুর ‘কল্কি অবতার’। তিনি মানব সভ্যতার রক্ষাকর্তা। ইহুদিরা এই মানব সভ্যতার বিপর্যয়ের হোতা। হিটলারই পারবেন বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে। তিনি এই সময়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আর্য মূল্যবোধ বিষয়ে হিন্দিতে প্রচুর সভা-সমিতিতে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন।
বাকি অংশ শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।