হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলার কয়েকটি গ্রামের কথা শোনাই। বছরের একটি বিশেষ সময়ে, এই গ্রামগুলোতে পালিত হয়, নিরবচ্ছিন্ন নীরবতা। এমনকী গ্রামবাসীরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলেন না। ভাব বিনিময় হয়, আকার ইঙ্গিতে। এই সময় পর্যটকদের এই গ্রামগুলোতে প্রবেশ নিষেধ। যদি কেউ এসেও যান, তাঁর কথা বলা একেবারেই বারণ। কেন রয়েছে এমন অদ্ভুত রীতি!
কুলু জেলার খান দশেক গ্রামে আছে এক অদ্ভুত প্রথা। গ্রামগুলির সমস্ত বাসিন্দারা বছরের এক বিশেষ সময় সবাই নির্বাক হয়ে যান। সেই মৌনব্রত চলে অন্তত বেয়াল্লিশ দিন। গ্রামগুলির নাম, গোশাল, সোলাং, শানাং, কোঠি, পালচান, রুয়ার, কুলাং, মঝাচ, বরুয়া, এবং উঝি। এলাকার বাসিন্দাদের এই ৪২ দিনের মৌনব্রত পালনের সঙ্গে প্রাচীন পুরাণের যোগসূত্র রয়েছে বলে বিশ্বাস অনেকেরই। অনেকেই বলেন এই মৌনতার সঙ্গে যোগ রয়েছে ঋষি গৌতমের।
আরও পড়ুন – গুপ্তচর যখন বাঙালি বধূ, আজও বিস্ময় জাগান Savitri Devi
স্থানীয় গ্রামবাসীরা মনে করেন, প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির সময়ে ঋষি গৌতম তাঁর কুটির বা সাধনধাম ছেড়ে তাঁর ভক্তবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওনা হন নক্ষত্রলোকে। সেখানেই তিনি থাকেন ৪২ দিন। এই সময় তাই এখানের বাসিন্দারা কেউই কোনও কথা বলেন না।
পুরাণে উল্লেখ মেলে ঋষি গৌতমের নানা কাহিনির। তাঁর আরেকনাম বামদেব গৌতম। রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে রামচন্দ্র পাষাণী অহল্যাকে উদ্ধার করেছিলেন। অহল্যা ছিলেন গৌতমের স্ত্রী। তিনি অহল্যাকে অভিশাপ দিয়ে পরিণত করেছিলেন পাষাণীতে। তাঁর নামের সঙ্গে জড়িত গোদাবরী নদীর জন্মকথাও। সে কারণেই সে নদীর নাম গৌতমী। এছাড়াও তিনি মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি বিষয়ক সংহিতা প্রণয়ণ করেন।
এই গ্রামগুলির বাসিন্দারা মনে করেন, এই সময় পৃথিবী থেকে কোনও প্রকার শব্দ গেলে অত্যন্ত ক্ষুধ্ব হবেন ঋষি গৌতম। তাই শুধু কথা বলা বন্ধ করা নয়, টিভি বা রেডিও চলে না এই কদিন। মোবাইলে একটু আধটু কিছু দেখা বা শোনা হলেও সেটা চলে ইয়ারফোনের মাধ্যমে। সবারই মোবাইল থাকে সাইলেন্ট মোডে।
আরও পড়ুন – ইন্দোনেশিয়ায় সমুদ্রের অতলে ঘুমিয়ে হিন্দু দেবদেবীর প্রাচীন মূর্তি! ব্যাপারটা কী?
ঋষি গৌতমের মন্দিরটি গোশাল গ্রামে। সেই মন্দিরে ঋষি গৌতম ছাড়াও রয়েছে বেদব্যাস এবং কাঞ্চন নাগের বিগ্রহ। যে সময় মৌনব্রত চলে, সেই সময়কালে কয়দিন মূলত এই গ্রামের মানুষজন চাষবাসের সমস্ত কাজ বন্ধ রাখেন। আপেল খেতে গাছের পরিচর্যা বা আপেল তোলাও থাকে বন্ধ।
সেই মন্দিরে কিন্তু এই কদিন পূজা হয় না। ঠিক মকরসংক্রান্তির দিন নিয়ম করে প্রতি বছরই বন্ধ হয়ে যায় মন্দির। লোকবিশ্বাস এখন যেখানে শতাব্দী প্রাচীন মন্দির, সেখানেই ঋষি গৌতম প্রজাপতি ব্রহ্মার উদ্দেশ্যে ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।