অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা তাপপ্রবাহের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করবেন, এর কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। গিগ ওয়ার্কারদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কাজ আর বিরামের ভারসাম্য না থাকা বড় সংকট হয়েই দেখা দিয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে যেহেতু সংকটের রূপ একেবারে অন্যরকম, তার সমাধানের পথও আলাদা হওয়া উচিত।
বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বাড়ছে তাপপ্রবাহ। প্রকৃতি এবং মানবসভ্যতার উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের একেবারে অন্য প্রভাব পড়ছে কর্মরতা মহিলাদের উপরে। বিশেষত যাঁরা অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন। গরমের সঙ্গে লড়তে লড়তে কাজ হারানোর ভয় তো আছেই। আর তার ফলে বাড়ছে গৃহহিংসাও।
তাপপ্রবাহের বলির খবর প্রায়শই প্রকাশ্যে আসে। এ-দেশে বহু মানুষই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গায় কাজের সুযোগ পান না। বিশেষত যাঁরা মাঠে-ময়দানে, কিংবা নির্মাণশ্রমিক হিসাবে কাজ করেন, তাঁদের সরাসরি প্রচণ্ড তাপের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। ফলত, তাপপ্রবাহে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের মানুষের কাছে আলাদা। কাজের ধরন অনুযায়ী শারীরিক সমস্যার মাত্রার হেরফের দেখা দেয়। আবার, পুরুষ শ্রমিকদের যে সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়, মহিলাদের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা তো আছেই; উপরন্তু সমস্যার অন্য পরতও চোখে পড়ে। বহু মহিলাই অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন। কৃষি, নির্মাণ থেকে শুরু করে বহু ক্ষেত্রেই মহিলা শ্রমিক কাজ করেন পুরুষদের থেকে তুলনামূলক কম পারিশ্রমিকেই। তবু এই উপার্জন সংসার চালানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে। কোভিডের সময় মহিলা শ্রমশক্তি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতি খুব ধীরে হলেও বদলেছে। তবে, উত্তরোত্তর তাপমাত্রা বৃদ্ধি মহিলা শ্রমিকদের কাছে নতুন প্রতিবন্ধকতা নিয়েই হাজির হয়েছে।
তাপ্রপ্রবাহের দরুন হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা যে দেখা দেয়, তা পুরুষ ও নারী দু’জনের ক্ষেত্রেই একই রকম বিপদ বয়ে আনছে। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়ছে প্রজননের ক্ষেত্রে। পেলভিক ইনফেকশনের মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে। পরপর কয়েক বছর ধরে তাপপ্রবাহে মহিলা শ্রমিকদের উপর কী প্রভাব পড়ছে তা সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সরাসরি প্রভাবের পাশাপাশি, এই সমস্যাগুলো আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। এর ফলে একদিকে কাজ হারানোর ভয় থাকছে। তাতে পারিবারিক আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আবার এর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ছে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যে। বহু মহিলা শ্রমিক জানিয়েছেন যে, এর আর একটি প্রভাব হচ্ছে, গৃহহিংসা বাড়া। এই সব সমস্যাই আদতে একসূত্রে বাঁধা। অর্থাৎ মহিলা শ্রমশক্তির উপর তাপপ্রবাহের প্রভাব বহুমাত্রিক। তা শুধু শারীরিক ক্ষতিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বরং গৃহহিংসার মতো সামাজিক সমস্যাতেও রূপান্তরিত হচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন তাই মৃত্যুদূত হয়ে সকলের কাছেই আসছে বটে, তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে সংকটও অন্যরকম, তাই লড়াইটা যেন আরও বৃহত্তর মাত্রার।
অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা তাপপ্রবাহের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করবেন, এর কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। গিগ ওয়ার্কারদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কাজ আর বিরামের ভারসাম্য না থাকা বড় সংকট হয়েই দেখা দিয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে যেহেতু সংকটের রূপ একেবারে অন্যরকম, তার সমাধানের পথও আলাদা হওয়া উচিত। তবে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে যে ধরনের আলোচনা চলছে তা আদৌ সেই মাত্রা স্পর্শ করছে কি? শ্রমশক্তিকে গুরুত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সামাজিক প্রভাব নিয়েও তাই সচেতন হওয়া জরুরি।