মাত্র ৬ জন। এই ক’জনই কথা বলেন। বাকি আর কারও জানা নেই। অস্তিত্ব রয়েছে এমনও এক ভাষার। উপভাষা নয়, একেবারে স্বতন্ত্র এক ভাষা। তবে স্রেফ এই একটা বিষয় নয়, ভাষা নিয়ে এমন জানা অজানা ছড়িয়ে আছে আরও। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভাষার দুনিয়া মোটেও ছোট নয়। বরং এতটাই বড় যে, কে-কখন-কোথায়-কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, সেই খোঁজ অনেকেই রাখতে ভুলে যান। তাই ভাষা নিয়ে আবেগ আর ভাষা বাঁচানোর তাগিদ খুব একটা ধরা পড়ে না অনেকের চোখেই। তাই বলে ভাষা নিজের গতিতে এগিয়ে যাওয়া থামায়নি। আর সেই প্রমাণ মেলে বিশেষ কিছু ভাষার কথা জানলে, যার ব্যবহারকারী মাত্র কয়েকজন, তবু তা স্বতন্ত্র অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
:আরও শুনুন:
তো বাংলা বানান ভুল দেখলে আপনি কী করবেন?
ভাষা নদীর মতোই বহতা। তবে তার মানে আদ্যন্ত এক। ভাষা সেই স্রোত, যা একজনের স্বর অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়। ভাষা সেই সেতু যা সকলকে বেঁধে বেঁধে রাখে। তাই কতজন সেই ভাষা ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে তেমন ভাবেন না ব্যবহারকারীরা। নিজেরাই নিজেদের মাতৃভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান। রেংমিটচ্য-এর কথাই ধরা যাক। বর্তমানে মাত্র ৬ জন মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। অথচ এটি কোনও উপভাষা নয়। স্বতন্ত্র এক ভাষা। যা ব্যবহার করেন বাংলাদেশের ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষজন। চরম অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে থাকা এই ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে। তবে তালিকায় যে স্রেফ এই ভাষাটিই রয়েছে এমন নয়। ক্যামেরুনের দক্ষিণ ব্যান্টরয়েড অঞ্চলে বুসু নামে এক ভাষা রয়েছে যা ব্যবহার করতেন মাত্র ৮ জন। ২০০৫ সালে সেই সংখ্যা ৩ জনে ঠেকে। তারপর থেকে আর সেই অর্থে খোঁজ মেলেনি এই ভাষার অস্তিত্ব আদৌ রয়েছে কি না। আসলে, এমন কয়েকটি ভাষা রয়েছে যা অত্যন্ত জনপ্রিয়। এবং তার ব্যবহারকারীর সংখ্যা এতটাই বেশি, যে অন্যান্য অপ্রচলিত ভাষার পক্ষে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা বেশ কঠিন হয়। সমীক্ষা বলছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত কয়েক হাজার ভাষার মধ্যে মাত্র ২৩টি ভাষায় কথা বলেন অর্ধেক বিশ্বের মানুষজন। সুতরাং বাকি ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা কতটা কম হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
:আরও শুনুন:
‘ভগবানের মতোই সব জায়গায় রয়েছে ওয়ো’, বিজ্ঞপনে অদ্ভুত দাবি সংস্থার, চটে লাল হিন্দু সংগঠন
ভাষা সম্পর্কে অবাক করার মতো বিষয় রয়েছে আরও। এই যেমন পাপুয়া গিনি দেশে মোট ৮০০টি ভাষা প্রচলিত। সেখানকার মানুষজন এমনই ভাষা বৈচিত্র বয়ে বেড়ান। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে সেখানেও বদল আসছে। হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক ভাষা। সমীক্ষা বলছে, স্রেফ অপ্রচলিত নয়, কথ্য ভাষাও অনায়াসে বিলুপ্ত হতে পারে। এমনকি এই আশঙ্কার কথাও বলা হয় যে, একটা সময়ের পর বর্তমানের প্রায় ৯০ শতাংশ ভাষায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এবং সেই সময়টা খুব বেশি দূরে নয়। তবে চেষ্টা যে হয় না, তা বলা ভুল। বিভিন্ন কর্মশালা, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তরফে চেষ্টা চালানো হয় বিলুপ্ত হতে বসা ভাষাকে বাঁচিয়ে তোলার। সেইসঙ্গে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নতুন করে নিজের মায়ের ভাষা বাঁচানোর তাগিদ মাথা চাড়া দেয় অনেকের মনে। তাতে ভালো ভাষার লাভ হয় বইকী!