ঘৃণাভাষণ নতুন কিছু নয়। তবে ভোটের বাজারে তার রমরমা বাড়ে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট বলছে, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে ঘৃণা ভাষণ। আর কী জানাচ্ছে ওই রিপোর্ট? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হেট স্পিচ, বাংলায় বললে ঘৃণা ভাষণ। অচেনা শব্দ নয়। তবু প্রত্যেকবার ভোট এলেই নতুন পরিচয়ে সামনে আসে ঘৃণা ভাষণ। কখনও সরকার পক্ষ, কখনও বিরোধী, আক্রমণ-পালটা আক্রমণে একে অন্যকে নিশানা করাই লক্ষ। সব ক্ষেত্রেই যা প্রবলভাবে প্রকট হয়, তা হল এই ঘৃণা ভাষণ।
তাতে কারও অসুবিধা হতেই পারে। সমস্যা নিয়ে অভিযোগও তুলতে পারেন যে কেউ। তবু ভোটের আগে ঘৃণা ভাষণের রমরমা কমার, কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। প্রচারের সময় ঘৃণা ভাষণ কমানোর দাবিতে কমিশনের দপ্তরে হাজার হাজার চিঠি পাঠিয়েছিল আমজনতা। তাতে লাভের লাভ প্রায় কিছুই হয়নি। কারণ সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক রিপোর্টে বলছে, ২০২৪-এ ভারতে ঘৃণা ভাষণের পরিমাণ ২০২৩-এর তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মার্কিন সংস্থা ‘হেট ল্যাব’। ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে দেখেছেন ওই সংস্থার সদস্যরা। তাতে নির্বাচনী প্রচারেও ভালোমতো নজর রাখা হয়েছিল। আর সেখানে দেখা গিয়েছে, অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে রীতিমতো বেড়েছে ঘৃণা ভাষণের পরিমাণ। রিপোর্ট জানাচ্ছে ঘৃণা ভাষণের প্রধান লক্ষ সংখ্যালঘুরা। এবং ৭৯.৯ শতাংশ ঘৃণা ভাষণ পরিচালিত হয়েছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি থেকেই। বাকিটা অন্যান্য রাজ্যের অর্থাৎ যেখানে বিরোধী দলের শাসন। সুতরাং কোনওভাবেই যে ঘৃণা ভাষণের দায় কোনও নির্দিষ্ট দলের ঘাড়ে চাপানো যায়, তা নয়। ওই রিপোর্ট আরও বিস্ফোরক কিছু তথ্য সামনে এনেছে। যার মধ্যে জিহাদ তত্ত্বটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এত দিন যে লাভ জিহাদ অর্থাৎ ভিনধর্মে জোর করে বিয়ে নিয়ে সরব হতেন হিন্দুত্ববাদীরা, ভোটের আবহে তার সঙ্গে জুড়েছিল আরও অনেক ধরনের জিহাদ। তবে এইসবই যে মিথ্যে ও উস্কানিমূলক তা রিপোর্টে সাফ জানানো হয়েছে।
আসলে, নির্বাচনের আবহে ঘৃণা ভাষণের রমরমা কোনও নতুন ঘটনা নয়। সরকার পক্ষের গাফিলতির খতিয়ান তুলে ধরতে হামেশাই বিভিন্ন কটূক্তি করে ফেলেন বিরোধী দলের নেতারা। একইভাবে সরকার পক্ষও নিজেদের জাহির করতে এমন কিছু বলেন, যা আদতে স্বাভাবিক নয়। যদিও এই স্বাভাবিক, অস্বাভাবিকের মাপকাঠি কমিশনের তৈরি। ভোট শুরুর বহু আগেই কমিশনের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রচারে কী কী বলা যাবে না। অন্যথায় করা পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। অভিযোগ জানানোর একাধিক পথ খুলে দেওয়া হয় কমিশনের তরফে। তবু ভোটের বাজারে ঘৃণা ভাষণকে এখনও ‘আউট অফ স্টক’ ঘোষণা করা যায়নি। ভোটের প্রচারে ঘৃণা ভাষণের দৌড়ে রাজনৈতিক দলগুলো যেন এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায় দেখ! আর সেকথাই প্রমাণ করল ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে ঘৃণা ভাষণ সংক্রান্ত রিপোর্ট।