ভালবাসার মাস। প্রতিটা দিন ভালোবাসার। জড়িয়ে ধরার, গোলাপ দেওয়ার, আদর করার, এবং অবশ্যই চকোলেট খাওয়ানোর জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে দিন। তবে এই চকোলেট খাইয়েও কাউকে খুন করা হয়েছিল, এমনটা ভাবতে পারেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক সেই কাহিনি।
ভালোবাসার মাসে প্রেমের অনুঘটক চকোলেট। উষ্ণ চুমু হোক বা আদর ভরা উপহার, চকোলেটের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু আরও অনেক কাজ রয়েছে চকোলেটের। এই যেমন কাউকে খুন করা! অবাক হচ্ছেন? এক্কেবারে সত্যি বাস্তব বলছি। চকোলেট খাইয়ে খুন, অপরাধ ইতিহাসে বেশ রোমাঞ্চকর ঘটনাই বটে।
চকোলেট পছন্দ করেন না, এমন মানুষ হাতে গোনা। মিষ্টি থেকে শুরু করে কেক, প্যাস্ট্রি, মুজ কিংবা আইসক্রিম, চকোলেটের কাটতি সর্বত্র। রংচঙে কিংবা সোনালি রাংতায় মোড়া একটুকরো চকলেট, হাতে পেলে মনটা কার না ভাল হয়ে যায় বলুন! কিন্তু এই ভালোবাসার টানেই যদি দেবত্ত প্রাপ্তি হয়? অবশ্যই তার নেপথ্যে বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। চকোলেট সিরাপের মধ্যে মেশানো বিষ। আর তা খাইয়ে খুন করা হল অনেককে। কে করলেন?
তাহলে খুলেই বলা যাক। ঘটনা ইংল্যান্ডের। সেখানকার এক ছোট শহরে থাকতেন ক্রিশ্চিয়ানা এডমান্ডস। যে সময়কার কথা বলছি, সেটা আনুমানিক ১৮৬০ সাল। ক্রিশ্চিয়ানার বয়স তখন ৩২ ছুঁইছুঁই। প্রেমে পড়লেন স্থানীয় এক ডাক্তারের। তিনিও মদত দিতেন। কিন্তু বাড়িতে তাঁর স্ত্রী বিষয়টা একেবারেই ভালো চোখে দেখতেন না। অগত্যা পথের কাঁটা সরাতে, ডাক্তারের স্ত্রীকে বিষ খাওয়ালেন ক্রিশ্চিয়ানা। তাও অভিনব কায়দায়। জনপ্রিয় বেকারির চকোলেট কেকে বিষ মিশিয়ে কাজ হাসিল করেছিলেন তিনি। পাছে কেউ সন্দেহ করে, তাই গোটা বিষয়টা সেরেছিলেন গোপনে। যদিও সে যাত্রায় ওই মহিলার মৃত্যু হয়নি। স্বামী ডাক্তার হওয়ার সুবাদে তাঁর প্রাণরক্ষা হয়। একইসঙ্গে ঘটনার নেপথ্যে যে ক্রিশ্চিয়ানা রয়েছে, তাও বুঝতে পারেনি কেউ। এই ঘটনার পর থেকেই ক্রিশ্চিয়ানার মনে অদ্ভুত বদল আসা শুরু হয়। একজন না মরলেও, ন্য অনেকের মৃত্যু হওয়া উচিত, এই লক্ষ্যে চকোলেটে বিষ মেশাতে শুরু করেন তিনি। স্থানীয় বেকারি থেকে কেক এনে তাতে চকোলেট সিরাপ ঢেলে সুন্দর করে সাজাতেন। তারপর আবার সেই কেক দোকানে দিয়ে আসতেন। এই সিরাপ আসলে, বিষ। তাই যারাই কেক কিনত তাঁদের মৃত্যু হত। আর এদিকে আনন্দে লাফিয়ে উঠতেন ক্রিশ্চিয়ানা। এমনটাও বহুবার হয়েছে, কোনও যুবককে ওই কেক কিনতে বাধ্য করিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানা। বলেছেন, এই ভালোবাসার উপহার তাঁর চাই। প্রেমে গদগদ হয়ে যুবকও তেমনটাই করেছেন। কিন্তু কেক কেনার পর আর ক্রিশ্চিয়ানার খোঁজ নেই। মনের দুঃখে যখন নিজেররাই সেই কেক খেয়ে নিতেন ওই যুবকরা, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হত পেটে ব্যাথা। ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে মৃত্যু অবধারিত। এইভাবে বেশ কয়েকছর চলার পর, ক্রিশ্চিয়ানার মনে হয় বিষয়টা আরও রোমাঞ্চকর করা যাক। কী করলেন, না বিষ কেক কিনে শহরের গণ্যমান্য মানুষদের পাঠাতে আরম্ভ করলেন। যেই কেক খায়, তারই মৃত্যু। এইসময় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুরু হয় তদন্ত। কিন্তু সবার চোখে ধুলো দিতে, নিজের জন্যও একখানা বিষ কেক পারসেল করিয়ে নেন ক্রিশ্চিয়ানা। ভেবেছিলেন এমনটা করলে, কেউ সন্দেহ করবে না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। পুলিশের জালে অবশেষে ধরা পড়েন তিনি। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন ক্রিশ্চিয়ানা। সেই থেকেই এমন কাজকর্ম। সাজা হয় তাঁর। এবং ইতিহাসের পাতায় বড় বড় হরফে তাঁর নামের পাশে লেখা হয়, ‘দ্য চকোলেট সিরাপ কিলার’।