হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে জনপ্রিয়তায় অন্যতম সেরা ছবি ‘থ্রি ইডিয়টস’। গভীর এক সামাজিক বার্তাই হাসির মোড়কে তুলে ধরেছিলেন পরিচালক। তবু এক টুকরো কাঁটা যে সেখানেও ছিল, পরিচালকের এই স্বীকারোক্তি তাই যেন সিনেমা নিয়েই নতুন করে ভাবতে শেখায়। বুঝতে শেখায় যে, এই বিরাট দেশ ভারতবর্ষে সব দৃশ্যই সকলের জন্য মজাদার নয়। শিল্প যাঁরা রচনা করেন, তাঁদের সে কথা ভুললে চলবে কী করে!
এক কামরার ঘর। মাথার ঘাম ফেলে খাবার তৈরি করছেন মা। বিছনায় শুয়ে অসুস্থ বাবা। ঠিক যেন পুরনো দিনের সাদা-কালো ছবি। রাজু রাস্তোগির বাড়িতে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখেছিল র্যাঞ্চো আর ফারহান। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। তবে, রুটি বেলা বেলনচাকি যখন অন্য কাজে ব্যবহৃত হল, অমনি চিত্তির! আর সে দৃশ্য দেখে হাসির রোল উঠল দর্শকের মধ্যে। সকলেই মনে করতে পারছেন যে, ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির সেই বিখ্যাত দৃশ্যের কথা বলা হচ্ছে। ‘খুচলি রোটি’ দৃশ্য হিসাবে তা রীতিমতো বিখ্যাত। তবে, এই দৃশ্য কি সকলের কাছে একই রকম মজার হয়ে উঠেছিল! বিশেষত যাঁরা এই দারিদ্র চাক্ষুষ করেছেন, তাঁরা কি এই ঠাট্টায় আদৌ আমোদ পেয়েছেন! সিনেমা ব্লকবাস্টার হওয়ার এত বছর পর সম্প্রতি পরিচালক জানালেন যে, অন্তত একজনের কাছে এ দৃশ্য হাসির নয়, বরং আপত্তিকরই মনে হয়েছিল।
যে কোনও শিল্পের মতোই, সিনেমাকেও দর্শক কীভাবে ইন্টারপ্রেট করবেন, তা পরিচালকের হাতে থাকে না। পরিচালকের ভাবনার সঙ্গে মিলে গেলে, ভাবনায়-ভাবনায় সেতু রচিত হয়। পরিচালক হাসাতে চাইলে দর্শক হাসেন, কাঁদাতে চাইলে কাঁদেন। তবে, এর অন্যথাও হতে পারে। এই দৃশ্যের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাজকুমার হিরানি জানিয়েছেন যে, একজন এই দৃশ্য নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তিনি আমির খানের টিমের একজন সদস্য। সেই ব্যক্তি ছবি দেখে সরাসরি আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন যে, ছবি তো ভালো লেগেছে। কিন্তু গরিবদের যে হাস্যকর করে দেখানো হল এখানে! এই যে দারিদ্র দেখানো হচ্ছে তা কি খোরাক করবার বিষয়! সন্দেহ নেই যে দৃশ্যটিকে মজাদার করে তোলা হয়েছিল দারিদ্রের অনুষঙ্গেই। তবে সেই গরবির ছেঁকা যিনি সহ্য করেছেন তার কাছে এটি মজার মনে না হওয়াই স্বাভাবিক। পরিচালক যেন সে কথায় সংবিৎ ফিরে পেয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি পুরনো আমলের সাদা-কালো ছবির কথা বলতে গিয়েই দৃশ্যটিকে ওভাবে নির্মাণ করেছিলেন। গরিবদের নিয়ে ঠাট্টা করতে চাননি। কিন্তু অন্তত একজনের যে তা মনে হয়েছিল, এই বিষয়টি ভাবিয়েছিল তাঁকে। আর তাই এতকাল পরে হলেও তিনি স্বীকার করেন যে, ওই দৃশ্য নির্মাণের ক্ষেত্রে তাঁর আরও সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল।
হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে জনপ্রিয়তায় অন্যতম সেরা ছবি ‘থ্রি ইডিয়টস’। গভীর এক সামাজিক বার্তাই হাসির মোড়কে তুলে ধরেছিলেন পরিচালক। তবু এক টুকরো কাঁটা যে সেখানেও ছিল, পরিচালকের এই স্বীকারোক্তি তাই যেন সিনেমা নিয়েই নতুন করে ভাবতে শেখায়। বুঝতে শেখায় যে, এই বিরাট দেশ ভারতবর্ষে সব দৃশ্যই সকলের জন্য মজাদার নয়। শিল্প যাঁরা রচনা করেন, তাঁদের সে কথা ভুললে চলবে কী করে!