সমাধিক্ষেত্র। কিন্তু কোনও ফুল নেই সেখানে। নেই কোনও ফলক। কান্না নেই, আবেগ নেই, কিছুই নেই। আছে শুধু জল। চারিদিকে নীল জল। কথা বলছি, এমন এক সমাধিক্ষেত্রের যা সমুদ্রের একেবারে গভীরে অবস্থিত। কী রয়েছে সেখানে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
যুদ্ধ। রক্তপাত। মৃত্যু। এইসবের নেপথ্যে কী? উত্তর অবশ্যই, মানুষ। কিন্তু খালি হাতে কি এত রক্তপাত সম্ভব? একেবারেই না। তাই যুদ্ধে অস্ত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মহাভারতের যুগ থেকেই ভয়ানক সব অস্ত্রের কথা আমরা জেনেছি। বিজ্ঞান যত আধুনিক হয়েছে, পাল্লা দিয়ে সামনে এসেছে একের পর এক ভয়াবহ অস্ত্র।
হঠাৎ অস্ত্রের কথা কেন বলছি?
সেই প্রসঙ্গেই ফেরা যাক। বিষয়টা, যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে। বলা ভালো, যুদ্ধাস্ত্রের সমাধিক্ষেত্র নিয়ে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। পৃথিবীতে এমন এক সমাধিক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে সার দিয়ে শোয়ানো থাকে শয়ে শয়ে যুদ্ধাস্ত্র। স্রেফ গোলা-বন্দুক নয়। যুদ্ধবিমান, বুলডোজার, জিপ, কামান, ট্যাঙ্কার সহ হরেক রকমের অস্ত্র রাখা আছে মহাসাগরের গভীরে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই অস্ত্র কাদের?
:আরও শুনুন:
বাঁচিয়েছিলেন প্রায় ৮০০০ শিশুকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাহসের আশ্চর্য নজির গড়েছিলেন এই নারী
সেকথা বলতে গেলে ফিরে যেতে হয় ১৯৪১ সালে। বিশ্বজুড়ে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তান্ডব। প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। কয়েক লক্ষ জীবনের বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে প্রলয় ঝড় বইয়েছিল এই যুদ্ধ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এইসময় অস্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করেছিল যুদ্ধাকারী দেশগুলি। সেই দলে আমেরির নাম ছিল উপরের দিকেই। অজানা অচেনা দ্বীপ-দেশে যুদ্ধাস্ত্র মজুত রাখত মার্কিন প্রশাসন। এমনই এই ঘাঁটি ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের ভানুয়াতু দ্বীপে। যুদ্ধবিমান, বুলডোজার, কামান সহ বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র মজুত করে রাখা ছিল সেই ঘাঁটিতে। শুধু তাই নয়, সৈন্যদের জন্য হাসপাতাল, পাকা বাড়ি, একাধিক রানওয়ে, আরও অনেক কিছুই ছিল ওই দ্বীপে। যদিও এমনি এমনি এই ঘাঁটি তৈরি করেনি আমেরিকা। নেপথ্যে ছিল বদলার স্পৃহা। আসলে, জাপানের পার্ল হারবার হামলার জবাব দিতেই এই দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল আমেরিকা। এখান থেকে দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালান মার্কিন সেনার জওয়ানরা। কাকপক্ষীতেও জানতে পারেনি এই দ্বীপের অস্তিত্ব সম্পর্কে। কিন্তু সময়ের নিয়মে একদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। তখন আর দ্বীপে থাকার মানে হয় না। নিভৃতবাস ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করে মার্কিন সেনা।
:আরও শুনুন:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ‘ভূত’, নাস্তানাবুদ হয়েছিল দুর্ধর্ষ নাৎসি বাহিনীও
এইসময় নতুন এক সমস্যা দেখা দেয়। সেনা বাহিনী না হয় নিজেদের মতো দেশে ফিরল, এতশত যুদ্ধাস্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে যাবে কে? তাতে খরচের বহরও অনেক। যুদ্ধের পর আমেরিকার যা আর্থিক অবস্থা হয়েছিল, তাতে আলাদা খরচ করে যুদ্ধাস্ত্র দেশে ফেরানোর পক্ষপাতী ছিল না কেউই। পাশাপাশি ওই ভানুয়াতু দ্বীপ ছিল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের উপনিবেশ। তাই আমেরিকা চায়নি যে তাদের যুদ্ধাস্ত্র লুকিয়ে রাখার এই গোপন ঘাঁটি অন্য কেউ জেনে যাক। এমনকি আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রও বহির্বিশ্বকে দেখাতে চায়নি মার্কিন প্রশাসন। তাই একপ্রকার প্রায় বাধ্য হয়েই যুদ্ধের সমস্ত অস্ত্র, সমুদ্রের গভীরে রেখে আসে মার্কিন সেনা। তারপর কেটে গিয়েছে বহু বছর। বর্তমানে ভানাতুয়া দ্বীপের ওই লুকানো ঘাঁটি পর্যটন ক্ষেত্র। কিন্তু সেখানকার মূল আকর্ষন, সমুদ্রের নীচে থাকা সারি সারি যুদ্ধাস্ত্র। পর্যটকরা সমুদ্রের গভীরে গিয়ে দেখে আসেন সেইসব। এতদিনে সবই নষ্ট হয়েছে, কিন্তু সমাধির ছবি যে এমনটাও হতে পারে, তা অবাক করে সকলকেই।