দুই দেশের সাহিত্যে সূত্র ধরে এই যে যোগাযোগের সেতু, আসলে তা দুই দেশের মানুষেরই যোগাযোগের ইতিহাস। ভাষা মানুষকে ধারণ করে। সুতরাং ভাষার ভিতর দিয়ে মানুষের যে সমন্বয়, তা মানবতার ক্ষেত্রই প্রতিষ্ঠা করে। তাই বইমেলায় এই আন্তর্জাতিক সাহিত্যের চর্চা জরুরি।
বইমেলা ধুলো, গার্গী শ্রেয়সী, চেনা মুখগুলো পরিচিত হাসি…! সংস্কৃতিপ্রিয় বাঙালির কাছে মনের আনন্দ প্রাণের আরাম বইপার্বণ। বাংলা সাহিত্যের উদযাপন শুধু নয়, কলকাতা বইমেলা আদতে আন্তর্জাতিক সাহিত্যেরই মিলনমেলা। বই আর সাহিত্য নিয়ে কটাদিন যখন মশগুল থাকবে বাঙালি, তখন ২০২৫-এ মাদ্রিদ বইমেলার থিমকান্ট্রি হতে চলেছে ভারতবর্ষ। ভারতীয় সাহিত্যের ধারার উদযাপন সে-দেশের সাহিত্যমহলে।
স্প্যানিশ সাহিত্যের সঙ্গে ভারতীয় সাহিত্যের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে স্প্যানিশ ভাষার সাহিত্য। বাংলা ভাষায় এই অনুবাদের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের চর্চা এ-দেশের সারস্বত সাধনার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি দিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ সাহিত্যচর্চাকে যে বহুকৌণিক দিক থেকে দেখতে শেখায়, সেখানে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ। শুধু সাহিত্যের ভাষা, আঙ্গিক,প্রকরণের জন্যই নয়; সাহিত্যের সঙ্গে যে গভীর ইতিহাসের যোগাযোগ, আর সেই সূত্র ধরেই বিশ্বের মানচিত্র যেভাবে প্রতিভাত হয়ে ওঠে, তা দেশে দেশে মানুষের আত্মিক সংযোগের কথা বলে। সাহিত্যচর্চা এক্ষেত্রে তাই এক বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধন করে বলা যায়। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষা মানুষের ইতিহাস এক ভাবে বিশ্লেষণ করে। সাহিত্য সেই ইতিহাস ধরে চলতে চলতেই মানুষ থেকে মানবে পৌঁছনোর কথা বলে। আর তাই সাহিত্যের ভিতর দিয়ে ভুবন-দর্শন বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে। ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যের মধ্যে দিয়ে যেমন দেশ ফুটে ওঠে, ঠিক তেমনই আন্তর্জাতিক সাহিত্যের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে বিশ্বের অন্য রূপ। স্প্যানিশ সাহিত্য আর ভারতীয় সাহিত্যমহলের এই যে সম্পর্ক তা যেন দুই দেশের মানুষের ইতিহাসের গভীর যোগাগের কথাই বলে। ৪৬ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় থিম কান্ট্রি হয়েছিল স্পেন। এবার ২০২৫ সালে মাদ্রিদ বইমেলার থিম কান্ট্রি হচ্ছে ভারতবর্ষ।
দুই দেশের সাহিত্যে সূত্র ধরে এই যে যোগাযোগের সেতু, আসলে তা দুই দেশের মানুষেরই যোগাযোগের ইতিহাস। ভাষা মানুষকে ধারণ করে। সুতরাং ভাষার ভিতর দিয়ে মানুষের যে সমন্বয়, তা মানবতার ক্ষেত্রই প্রতিষ্ঠা করে। তাই বইমেলায় এই আন্তর্জাতিক সাহিত্যের চর্চা জরুরি। ভারত ও স্পেনের মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই তাই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে এই আদানপ্রদান।