ভিড় সামলানোই কাজ। জন্মদিন হোক বা বিশেষ কোনও অনুষ্ঠান, সবকিছু সুষ্ঠভাবে সামলানোর দায়িত্ব থাকে এইসব সংস্থার কাঁধে। দক্ষতার সঙ্গে সেসব করেও থাকে তারা। কিন্তু কুম্ভের ভিড় সামলানো কি চাট্টিখানি কথা! কোন সংস্থা এই মেলার ভিড় সামলায় জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হাজার নয়, লাখ নয়, কয়েক কোটি মানুষ একসঙ্গে হাজির হয়েছেন কুম্ভে। সেই ভিড় সামলানো মুখের কথা নয়। অবশ্য এই প্রথম নয়। প্রতিবার কুম্ভের ছবিটা খানিকটা এরকমই হয়। কীণ্টূ এত মানুষ থাকবেন কোথায়, স্নানের সময় কীভাবে শৃঙ্খলা বজায় থাকবে, সেইসব দেখার দায়িত্ব দিল্লির এক সংস্থা। জনপ্রিয় এই ইভেন্ট ম্যানেজিং সংস্থাই বিগত ১০০ বছর ধরে কুম্ভের ভিড় সামলে আসছে।
কথা বলছি, লাল্লোজি অ্যান্ড সন্স সম্পর্কে। এবারের কুম্ভে যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে এরাই। মেলা প্রাঙ্গণে হোটেল তৈরির সুযোগ নেই। তাই ভক্তদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করতে হয় অস্থায়ী তাঁবুতে। কিন্তু এত মানুষ থাকার জন্য ১০-১২ টা তাঁবু যথেষ্ট নয়। সংখ্যায় অন্তত কয়েক হাজার তাঁবু তৈরি করতে হবে। লাল্লোজি থাকতে চিন্তা নেই। তাঁরাই সবকিছু দায়িত্ব নিয়ে উতরে দেবেন। বিগত ১০০ বছরে এমন বহু কুম্ভের সাক্ষী থেকেছে প্রয়াগ সঙ্গম। স্বাধীনতার আগে থেকেই এই মেলায় বহু ভক্তের ভিড় হয়। মোটামুটি সেই সময় থেকেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে আসছে এই সংস্থা। শোনা যায়, ১৯২০ সালে জওহরলাল নেহেরুর অনুরোধে দিল্লি থেকে এসে এই মেলার দায়িত্ব নেন লাল্লোজির তৎকালীন কর্নধার। শুরু থেকেই মেলার অস্থায়ী বাসস্থান তৈরির দায়িত্ব সামলে আসছেন তাঁরা। বর্তমানে কুম্ভের প্রায় ৯৫% থাকার জায়গাই এই সংস্থার তৈরি। শুধু থাকার জায়গা নয়, টয়লেটও তৈরি করতে হয় লাল্লোজি অ্যান্ড সন্সকে। ৫০হাজারেরও বেশি টয়লেট তৈরি করতে হয় প্রতিবার। সেইসব পরিস্কার করাও মুখের কথা নয়। সবই যত্ন নিয়ে করে থাকে এই সংস্থা। কয়েক হাজার কর্মী কাজ করেন কুম্ভের সময়। তবে এইসব ক্ষেত্রে তেমন চাপ থাকে না, সমস্যা হয় ভিড় সামলানোয়।
এমনিতে কুম্ভের সময় যোগীরাজ্যের প্রশাসনকে বিশেষ ভূমিকায় দেখা যায়। হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকেন মেলা প্রাঙ্গণে। মেলার ভিড় সামলানোর মূল দায়িত্ব তাঁদেরই। কিন্তু এই সংস্থাও সেই কাজে হাত লাগায়। অন্তত তাঁদের তৈরি তাঁবু সংলগ্ন এলাকায় ভিড় বাড়লে তাঁরাই সবটা সামলে দেন। এছাড়া বিশেষ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যদি মেলায় আসেন তাহলেও এঁরাই দায়িত্ব নিয়ে সবটা আয়োজন করেন। নেতা মন্ত্রী হোক বা উচ্চপদের সরকারি আমলা, কুম্ভে কেউই ভিআইপি নন। তাও এরা যদি মেলায় আসেন তাহলে তো ভিড় হতে বাধ্য, সেক্ষেত্রে ম্যানেজ করার দায়িত্ব থাকে এই সংস্থার কাঁধে। দক্ষতার সঙ্গে সেই কাজ করে থাকেন লাল্লোজি।