এ যেন সিনেমার মতো। টুয়েলফথ ফেল’ ছবির মনোজ কুমারের মতোই স্বপ্নের যাত্রায় পদার্পণ করলেন শ্রীনাথ। পেশায় কুলি, রেলের ওয়াইফাই ব্যবহার করে পড়াশোনা। গরীব পরিবারে জন্ম হয়েও নিজের স্বপ্নকে পূরণ করেছে কেরলের এই যুবক। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পরিস্থিতি যত কঠিন হোক না কেন, ধৈর্য হারালে চলবে না। সঙ্গে থাকতে হবে জেদ আর পরিশ্রম। তাহলেই পৌঁছনো যাবে জীবনের মূল লক্ষ্যে। ‘টুয়েলভথ্ ফেল’ ছবির মনোজ কুমারের গল্প আমাদের সে কথাই বলে। তবে সিনেমা নয়, জীবনের বাস্তবতাও অনেক সময় হয়, সিনেমার মতোই। কেরলের বাসিন্দা শ্রীনাথের কাহিনি ঠিক সেরকমই। পেশায় কুলি, রেলের ওয়াইফাই ব্যবহার করে পড়াশোনা। আর সেখান থেকে ইপিএসসি পরীক্ষায় পাশ। জীবনের চিত্রনাট্য নিজেই লিখেছেন শ্রীনাথ।
ছোটো থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে আইএএস অফিসার হওয়ার। কিন্তু সংসারের দারিদ্র টেনে এনেছিল অন্য পথে। পরিবারের দায়িত্ব পালনের জন্য কেরলের কোচিতে এরনাকুলাম রেলস্টেশনে কুলির কাজ করতে হত তাঁকে। সামান্য রোজগার। প্রত্যেক দিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয়। সংসার খরচ বাদে পড়াশোনার জন্য আলাদা করে খরচ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, কখনও হার স্বীকার করেননি শ্রীনাথ। ২০১৬ সালের পর ভারতের সমস্ত রেলওয়েতে যখন ফ্রি-তে ওয়াইফাই পাওয়া গেল, তখন যেন হাতে চাঁদ পেলেন তিনি। নিজের কষ্ট করা উপার্জনের টাকায় একখানা স্মার্ট ফোন কিনে নিলেন। আর রেলের ওয়াইফাই ব্যবহার করেই নিয়মিত পড়াশোনা করতে শুরু করে দিলেন। সারাদিন রেল স্টেশনে কুলির কাজ। আর ফাঁকা সময়ে অনলাইনে ক্লাসে পড়াশোনা। এই ছিল শ্রীনাথের রুটিন। সেই পরিশ্রমের ফল মিলল। প্রথমে কে.পি.এস.সি পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। কিন্তু সেখানেই ইতি টানেননি। চতুর্থবার চেষ্টা করার পর, ইউ.পি.এস.সি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করে আই.এ.এস অফিসার হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করে তবেই থেমেছেন তিনি। এ যেন ঠিক টুয়েলভথ্ ফেল-এর সেই মনোজ কুমার।
শ্রীনাথের এই গল্প সিনেমার মতো মনে হলেও, আদৌ তা নয়। এ দেশে বাড়ছে অসাম্যের মাত্রা। নানা কারণে যে সুযোগ খুব সহজে পাওয়ার কথা ছিল, তা যেন আর পাওয়া যাচ্ছে না। সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা সমবেত ভাবে কেউই যেন খুঁজে পাচ্ছেন না। মাঝখানে জেগে থাকে এক একজন শ্রীনাথের কাহিনি। একক প্রচেষ্টায় যাঁরা সফল হয়ে ওঠেন। যেটুকু পাওয়া যায়, তা দিয়েই স্বপ্ন পূরণ করেন। তাঁর মেধা তো এগিয়ে দেবে দেশকেই। তবু আরও একজন শ্রীনাথকে কি এভাবেই সংগ্রাম করতে হবে? দেশের মানবসম্পদ নিয়ে আর কবে ভাবনা হবে সবিস্তারে? শ্রীনাথের গল্প যেন এই কঠিন প্রশ্নের সামনেই আমাদের এনে দাঁড় করায়।