রাগী চরিত্র আজও যে তৈরি হচ্ছে না, তা নয়। তবে তা আর সেই অ্যাংরি ইয়াং ম্যানের সামগ্রিক রূপ নিতে পারছে না। অথচ আজ দেশের ধারণাতেও এসেছে বদল। বেড়েছে অসাম্যের মাত্রা। ক্রোধ, অভিমান তাই আছেই। তা কি অন্য ভাবে তৈরি করবে নতুন কোনও অ্যাংরি ইয়াং ইন্ডিয়ান?
তিনি প্রৌঢ় হলেন। যে যুবক তাঁর রাগী মূর্তিতে সমাজের অন্যায়, অব্যবস্থার প্রতিকারে মুখর হয়েছিলেন, তাঁর বয়স পঞ্চাশ হল। তিনি আর কেউ নন, হিন্দি সিনেমার ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’। যে ‘দিওয়ার’ ছবি থেকে দর্শক এই রাগী যুবকের সঙ্গে সম্যক পরিচিত হল, সেই ছবি পূর্ণ করল পাঁচ দশক।
১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তি পেয়েছিল ‘দিওয়ার’। স্বভাবতই নস্ট্যালজিক এই রাগী যুবকের অন্যতম স্রষ্টা জাভেদ আখতার। সময় যে কী দ্রুত আর নীরবে চলে যায়, তা উঠে এসেছে জাভেদ আখতারের কথায়। সেলিম-জাভেদ জুটির হাতেই আইকনিক এই যুবকের যাত্রা শুরু। বছর দুয়েক আগের ‘জঞ্জির’ ছবিতেই তার আভাস রাখা ছিল। তবে সেই রাগী যুবক যেন সমাদৃত হয়ে উঠল যশ চোপড়ার ‘দিওয়ার’ থেকেই। সময় যেন ওঁৎ পেতেই ছিল এমন একটি চরিত্রের জন্য। সাতের দশকের মাঝামাঝি তখন বদলে যাচ্ছে ভারতের রূপ। স্বাধীনতা-উত্তর যে স্বপ্ন লেগে ছিল নতুন দেশের চোখে, তা ক্রমশ মুছে যেতে শুরু করেছে। অন্যায়, অসাম্যের মাত্রা ক্রমশ কবজা করছে জনজীবনকে। সময়ের ভিতরে জমে ওঠা সেই রাগ যেন একজন যুবকের চরিত্র হয়েই বেরিয়ে এল। যে যুবক রাগী বটে, আবার খানিক বিভ্রান্ত। কিংবা অভিমানী। খানিকটা যেন নিয়তির উপর রাগ করেই সে ভুল পথ বেছে নেয়। তর্ক করে তার অগ্রজের সঙ্গে। খতিয়ান দেয় বিলাস বৈভবের। যাঁরা তার বাবাকে চোর আখ্যা দিয়েছিল তাঁদের উপর প্রতিশোধ নিতে সে যেন বাজি রাখে নিজের জীবনকেই। আর ক্রমশ সরে যায় মায়ের থেকে। দর্শক বুঝতে পারেন, এই মা-ও শুধু একজন চরিত্র নয়। বরং দেশের ধারণা। সেই ধারণা আর প্রজন্মের অভিমান-ক্রোধের মধ্যে অনতিক্রম্য দূরত্ব। ‘দিওয়ার’ বলতে থাকে সেই গল্প। আর দর্শক যেন তাঁর অন্তরের কথা খুঁজে পায় বিজয়ের চোখে। ভারতবর্ষের অ্যাংরি ইয়াং ম্যান-এ। আজ এ কথা সকলেরই প্রায় জানা যে, এই চরিত্রের জন্য প্রাথমিক পছন্দ ছিলেন রাজেশ খান্না। কিন্তু রাজেশ খান্না মানেই যে ভালোবাসার পানসি, স্বপ্নের সেই নীল পদ্য আর চোখে লেগে ছিল না। অতএব চিত্রনাট্যকার জুটি বেছে নেন অমিতাভ বচ্চনকে। বাকিটা ইতিহাস।
:আরও শুনুন:
এত রিল কেন! কুম্ভের রিল-এ-রেসে রেগে আগুন হিন্দু ধর্মগুরু
আজ পঞ্চাশপূর্তিতে এসে বলা যায়, সেই যুবক যেন প্রৌঢ় হল। তাই বলে রাগ কি চলে গেছে! এ কথা ঠিক যে সেদিনের সেই রাগের প্রকাশ ঘটেছিল ম্যাসকুলিনিটি অবলম্বন করেই। এখনকার সিনেমাতেও তা আছে। তবে বদলে গিয়েছে রাগের চরিত্র। রাগী চরিত্র আজও যে তৈরি হচ্ছে না, তা নয়। তবে তা আর সেই অ্যাংরি ইয়াং ম্যানের সামগ্রিক রূপ নিতে পারছে না। অথচ আজ দেশের ধারণাতেও এসেছে বদল। বেড়েছে অসাম্যের মাত্রা। ক্রোধ, অভিমান তাই আছেই। তা কি অন্য ভাবে তৈরি করবে নতুন কোনও অ্যাংরি ইয়াং ইন্ডিয়ান? দিওয়ার-এর পঞ্চাশে দাঁড়িয়ে সেই ভাবনার সময় এসেছে সিনেমহলে।