বিজয় হাজারেতে করুণ নায়ারের ছিল দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। স্বয়ং শচীন তেন্ডুলকরও প্রশংসা না করে থাকতে পারেননি। তবুও জায়গা হল না ভারতীয় ক্রিকেট টিমে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরোয়া ক্রিকেট আনা দরকার এই ক্রিকেট্মহলে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে বোর্ড নিজেই রয়েছে সংশয়। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বিজয় হাজারে ট্রফিতে চার-চারটে শতরান। ঝুলিতে এই মুহূর্তে ৭৫২ রান। পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা বাধ্য করেছে ক্রিকেট-ঈশ্বরকে মুখ খুলতে। তবে, তাতে কি জাতীয় দলের দরজা খোলে! করুণ নায়ারের ঘটনা যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেট ভারতীয় বোর্ডের কাছেই উটের পাকস্থলী হয়ে গিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে নৌকাডুবির পর থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে চর্চা ফিরছিল ভারতীয় ক্রিকেটমহলে। বলা হচ্ছিল, ডোমেস্টিকে ঘাম ঝরালে আর আন্তর্জাতিকে এমন হুমড়ি খেয়ে পড়তে হত না! টেস্টের মতো ফর্ম্যাটে যেন টিকে থাকার শৈলীই ভুলে গিয়েছেন ভারতের ক্রিকেটাররা। একা কুম্ভ বুমরাহ্! তা তিনি আর কত দিক রক্ষা করবেন! অন্ধ হলে কি আর প্রলয় বন্ধ থাকে! এরপরই যেন ঘরোয়া ক্রিকেটের গুরুত্ব নতুন করে মালুম হল। বিশেষজ্ঞরা পর্যন্ত বলতে শুরু করলেন, নক্ষত্রদের এবার মাটিতে নামার সময়। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে দুটো কাজ তাঁদের করা উচিত। এক, নিজেদের পুনরাবিষ্কার করা। আর দ্বিতীয়ত, তরুণ ব্রিগেডের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলা। তাতে উপকৃত হবেন তরুণরাও। কেন আজকালকার তরুণরা ঘরোয়া ক্রিকেটে মন দেন না, তা নিয়েও বিস্তর সমালোচনা চলছিল। শুনে মনে হচ্ছিল, রনজি, বিজয় হাজারে কিং দলীপ টফির সুদিন বোধহয় এবার ফিরল বলে!
তবে, এসবের মধ্যেই থেকে গেলেন একজন মূর্তিমান করুণ নায়ার!
:আরও শুনুন:
বেপরোয়া নয় ঘরোয়া! তখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন, গিল স্কুলে, শেষ কবে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন কোহলি?
বিজয় হাজারেতে যে পারফরম্যান্স তিনি করেছেন, তাতে তাঁর দলে থাকা পাকা না হয়ে যায় না। স্বয়ং শচীন তেন্ডুলকর তাঁর ক্রিকেটের প্রশংসা না করে পারেননি। আর এটাই তো হওয়ার কথা। ঘরোয়া ক্রিকেটে যিনি ফর্মে আছেন, তাঁকেই তো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সুযোগ দেওয়ার কথা। অথচ নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর যা বললেন, তার সারমর্ম এই যে, ভালো খেলেছেন ভালো কথা। কিন্তু এতজনকে দলে জায়গা দেওয়া যাবে কী করে! মোটে তো ১৫টি জায়গা। অতএব চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান-ডে সিরিজে জায়গা হয়নি করুণ নায়ারের। হয়তো পরবর্তী সময়ে কোনও টেস্টে তাঁর জায়গা হবে। সে তো আলাদা কথা। কিন্তু করুণ নায়ার যেন প্রমাণ করে দিলেন, ভারতীয় বোর্ড আর ঘরোয়া ক্রিকেটের সম্পর্ক আদতে যেন ক্ল্যাসিক কনফিউশন। একদিকে বোর্ড চাইছে, তরুণরা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলুন। তারকারা ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদের দুর্বলতা সারিয়ে তুলুন। অন্যদিকে যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি অনির্বাচিত হয়ে থেকে যাচ্ছেন। তাহলে কোন যুক্তিতে তরুণরা ঘরোয়া ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেবে? বোর্ডের কাছে সম্ভবত এর কোনও উত্তর নেই।
:আরও শুনুন:
প্রতিভার নেই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি! শচীন-কাম্বলির পুনরাবৃত্তি কি যশ-পৃথ্বী?
অনেকেই বলছেন ভারতীয় ক্রিকেটে এবার ফিরে এসেছে চ্যাপেল-জমানা। খোলনলচে বদলানোর পালা চলছে। তাতে কার ঘাড়ে যে কখন কোপ পড়বে তার ঠিক নেই। তবে ক্রিকেটমহলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, লবি বনাম লবিতে জর্জরিত ভারতীয় ক্রিকেট। গুজরাট-মুম্বই লবির দাপট বেড়েছে, ফলত কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে অন্য প্রদেশের ক্রিকেটাররা। তারকা কেউ কেউ অভিমানে সরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ হয়তো আরও কিছুদিন চালিয়ে যাবেন, তবে তাঁদের উত্তরসূরি যে কে, বোর্ডের কাছে তার স্পষ্ট রূপরেখা নেই। তাহলে কি এই জাঁতাকলে এবার গেরোয় পড়বে ভারতের ক্রিকেটই! ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রাণপণে চাইবেন, তা যেন কখনই না হয়। তবে, যা-ই হোক না কেন, করুণ নায়ার বোর্ডের কাছে একটি প্রশ্নচিহ্ন হয়েই থেকে যাবেন। প্রশ্নটি এই যে, ঘরোয়া ক্রিকেটকে কি বোর্ড নিজেই সেভাবে গুরুত্ব দেয়? নাকি সময় সময় দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয় ক্রিকেটারদের উপরে! জবাবদিহি বোর্ড করুক বা না-করুক, করুণ নায়ারের করুণ পরিণতি বোর্ড আর ঘরোয়া ক্রিকেটের সম্পর্কে যে অস্বস্তিদাগ এঁকে দিল, তা সহজে মোছার নয়। স্ববিরোধিতার এমন উদাহরণ আর যাই হোক জেন্টলম্যান্স গেমের পক্ষে যে স্বাস্থ্যকর নয়, তা কি বুঝবে ভারতীয় বোর্ড?