পরিবার ছেড়ে সাধনার পথ বেছে নিয়েছেন। যাবতীয় ভোগ বিলাস ভুলেছেন। জীবনের একটাই উদ্দেশ্য, ঈশ্বরের সাধনা করা। কিন্তু নশ্বর জীবন একদিন তো ফুরোবেই! তারপর কী হবে সেই প্রাণহীন দেহের? নিষ্ঠাভরে সাধারণ গৃহীর সৎকার করে পরিবার। কিন্তু নাগা সাধুদের শেষকৃত্য হয় কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সাধুদের জীবন সহজ নয় মোটেও। কঠিন পথ পেরিয়ে এই জীবনে পা রাখেন তাঁরা। এখানে ভোগ বিলাসের লেশমাত্র নেই। অনেক সময় খাওয়ার কথা ভুলেও জপ করে যেতে হয় নিরন্তর। কেউ কেউ আরও কঠিন সাধনায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। বিশেষ করে নাগা সাধুদের জীবন তো একেবারেই অন্যান্য সাধুদের মতো নয়।
:আরও শুনুন:
শুধু পুরুষ নয়, কুম্ভে হাজির মহিলা নাগা সাধুরাও, কেমন তাঁদের জীবন?
কুম্ভ মেলায় সাধুদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। কারও মাথায় আস্ত বাগান, কেউ পরেছেন ৪৫ কেজি রুদ্রাক্ষ মালা, কেউ আবার আইআইটি পাস আউট! তবে নাগা সাধুরা বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকেন। এবারের কুম্ভেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এঁরা যে সকলের চাইতে আলাদা তা বলাই বাহুল্য। গেরুয়াধারী সন্ন্যাসীদের মতো শিষ্যের দল ভিড় করে থাকে না এঁদের চারপাশে। বরং নিভৃতযাপন এঁদের বেশি পছন্দের। কুম্ভমেলায় তাও বা প্রকাশ্যে দেখা যায়, কিন্তু বছরের অন্যান্য সময় এঁরা কোথায় থাকেন সেই খোঁজ নেই কারও কাছে। এই ভিড়ে ঠগ-জোচ্চোর রয়েছে বহু। তাঁদের আসল উদ্দেশ্য কোনওক্রমে ভিক্ষার টাকায় ঝুলি ভরানো। তবে আসল নাগা সাধুদের জীবন একেবারেই অন্যরকম। এঁদের দলে মহিলা সন্ন্যাসীও রয়েছে। যদিও তাঁদের থাকার জায়গা আলাদা, সাধনার ধরনও আলাদা। তবে এই পথে আসার নিয়ম মোটের উপর প্রায় এক। ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয় নাগা সাধুদের। সন্ন্যাস জীবনে আসার আগে নিজেকেই নিজের শ্রাদ্ধ করতে হয়। আসলে, পরিবারের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার উদ্দেশেই এমন নিয়ম। তাই জীবনের শেষ সময় উপস্থিত হলেও এঁদের একাই থাকতে হয়। আর এখানেই প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে হয় এঁদের শেষকৃত্য?
:আরও শুনুন:
রাষ্ট্রের ‘রা’ আর মাতার ‘মা’ মিলে ‘রামা’, এই নামেই গরুকে ডাকতে চান সন্ন্যাসীরা
এমনিতে যে যার সম্প্রদায় অনুযায়ী সাধুদের শেষকৃত্য হয়। কারও ক্ষেত্রে দাহ করা হয় মৃতদেহ, কারও দেহ সমাধিতে শায়িত থাকে। নাগা সাধুর অন্তিম সংস্কারও সেই সম্প্রদায়ের নিয়মেই হয়। তবে কখন কোন সাধু দেহ রাখছেন তা বোঝা কঠিন। কারণ কুম্ভ ছাড়া এঁদের দেখা মেলা ভার। অনেকে বলেন, হিমালয়ে তপস্যারত অবস্থায় অনেক সাধুর দেহাবসান হয়। সেক্ষেত্রে পাহাড়ি জন্তুরাই দেহের সদগতি প্রাপ্ত করায়। যদিও এর প্রামান্য নথি নেই। যেসব সাধুদের গৃহী সন্ন্যাসী রয়েছে, গুরুর প্রয়াণে সৎকারের ব্যবস্থা করেন তাঁরাই। তবে সাধুদের মধ্যে এক বিশেষ সম্প্রদায় রয়েছে যাঁদের অঘোরী বলা হয়। এঁরা অত্যন্ত উগ্র প্রকৃতির। ভয়াবহ জীবন যাপন করেন। শোনা যায়, চিতায় জ্বলতে থাকা মৃতদেহের মাংসও ভক্ষণ করেন এই অঘোরীরা। এঁদেরও পরিবার নেই। কিন্তু এঁদের শেষকৃত্যের রয়েছে বিশেষ নিয়ম। শোনা যায়, অঘোরী সাধু মারা গেলে তাঁর দেহ ৪০ দিন উলটো করে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। পোকামাকড় সেই দেহ কুড়ে কুড়ে শেষ করে। তবে এই নিয়ম আদৌ মানা হয় কি না, তা তর্কের বিষয়। প্রকাশ্যে এমন কাণ্ড দেখলে যে কেউ ভয় পাবেন। তাই এই ধরনের কাজ লোকচক্ষুর আড়ালেই হয়ে থাকে। এইসব সাধুরা এমনিই গোপনীয়তা পছন্দ করেন। জীবনের শেষ সময়টাও তাই একেবারে অন্তরালে থেকে পঞ্চভূতে বিলীন হন।