প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাই ফেলে দেওয়া হয়েছে রাস্তায়। দূষণ ছড়াচ্ছে ঠিকই, তাতে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে এই সমস্যা সর্বজনীন। কিন্তু এই সমস্যাকে কাজে লাগিয়েই লাখপতি হলেন দুই যুবক। কী করেছেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কথায় বলে, যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন! বাস্তবে যেন তাই করেছেন বিহারের দুই যুবক। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে আসবাব বানিয়ে চমকে দিয়েছেন তাঁরা। তাতে রোজগারও হয়েছে ভালোই। মানে, রথ দেখা আর কলা বেচা, দুইই হয়েছে। প্লাস্টিক সরিয়ে যেমন পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা কমেছে, তেমনই পকেট ভরিয়েছেন ওই দুই যুবক।
প্লাস্টিক কীভাবে দূষণের জন্য দায়ী, সে কথা আজ আর নতুন নয়। একইসঙ্গে উপকারী এবং অপকারী এই জিনিসটি। বেশি ভাবার দরকার নেই, চারদিকে তার অজস্র নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। বাজার থেকে কেনা জিনিসপত্রের থলি, রোজকার টিফিনে আনা জলের বোতল কি টিফিনবক্স, ছোটদের খেলনা, প্লাস্টিককে বাদ দিয়ে এগোনোর উপায় নেই। সহজলভ্য, দামে কম, টেকসই, সহজে নষ্ট হয় না, জল লাগলেও ক্ষতি নেই, দেখা যাচ্ছে প্লাস্টিকের গুণের তালিকা বেশ লম্বা! কিন্তু সব গুণ নষ্ট হয়ে যায় একটি মহৎ দোষে। একেবারেই পরিবেশবান্ধব নয় এই জিনিস। যা নষ্ট হয় না, তা মাটিতেই পড়ে থাকুক কি জলেই ফেলা হোক, সে তো সেখানেই থেকে যাবে। আর এইভাবে গড়ে ওঠে বর্জ্যের স্তূপ, যা অক্ষয়। এই সমস্যা মেটাতেই অভিনব উদ্যোগ নেন বিহারের বিকাশ কুমার ও রাহুল ভাসুখি। একেবারেই সাধারণ পরিবারের এই দুই ভাই ঠিক করেন প্লাস্টিক মুক্ত শহর গড়বেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ, শুরু করেন ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের জিনিস কুড়ানোর কাজ। কিন্তু স্রেফ কুড়িয়ে আনা নয়, তাঁদের ভাবনা ছিল অন্যরকম।
আইআইটি থেকে পড়াশোনার সুবাদে কারিগরি বিদ্যায় যথেষ্ট জ্ঞান ছিল বিকাশের, এদিকে রাহুলের পড়াশোনা ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে। দুজনেই ঠিক করেন এই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহার যোগ্য করে তুলবেন। এবং বুদ্ধি করে এমন জিনিস বানাতে শুরু করেন যা প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে সকলের কাছে। কখনও রাস্তা থেকে কখনও কারও বাড়িতে গিয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা। এরপর সেই প্লাস্টিক গলিয়ে বিশেষ কায়দায় বানিয়ে ফেলেন বিভিন্ন আসবাব। কখনও ডাইনিং টেবিল, কখনও চেয়ার-টুল, কখনও আবার অন্য কিছু। মাত্র ১০ হাজার টাকা দামে মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা। আর সেই মেশিনের জোরেই রোজগার হতে থাকে লাখ টাকা। অল্পদিনেই তাঁদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ১০০ টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার যোগ্য করে তুলেছেন তাঁরা। এইভাবে কখন যে ১০ লাখ টাকার উপর লাভ করে ফেলেন তা বুঝতেই পারেননি দুইভাই। স্রেফ বুঝেছিলেন দুজনের ভাবনায় কোনও ভুল নেই। পরিশ্রম করেছেন, তারই ফল পাচ্ছেন। আসলে, কষ্ট করলে কেষ্ট মিলবে একথাই যেন ফের মনে করিয়ে দিলেন বিহারের দুই ভাই।