তথ্য বলছে, প্রচার ও বিপণ্নে সংস্থাগুলো প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা খরচ করছে এবারের মেলায়। একাধিক সংস্থা, এবং বহু উদ্ভাবনী কাজে কুম্ভে আসা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ। আদতে ধর্মীয় মেলা হলেও তাই কুম্ভ শুধু সেই সীমাতেই আটকে থাকছে না। বরং একে অর্থনীতি ও ব্র্যান্ড-ভ্যালু বাড়ানোর মিলনমেলা বললেও, বোধহয় ভুল কিছু বলা হবে না।
অমৃতকুম্ভের সন্ধানে কোটি কোটি ভক্ত। প্রস্তুতি থেকে শুরু করে স্নান পর্ব ধরলে প্রায় ৪৫ দিন ধরে বহু বহু মানুষের সমাগম। আর এই পরিসরই বাণিজ্যের দরজা খুলে দিয়েছে নামী সংস্থাগুলোর কাছে। নিজেদের ব্র্যান্ড জনসমক্ষে তুলে ধরার ক্ষেত্রে এর থেকে ভালো জায়গা আর হয় না। ফলত কুম্ভে যেমন ধর্মের চর্চা, তেমনই নেপথ্যে চলছে ব্যাবসার অঙ্কও।
সরাসরি বাণিজ্য বলতে যা বোঝায়, তার বাইরে গিয়েই কুম্ভের মতো ইভেন্টকে কাজে লাগাচ্ছে সংস্থাগুলো। নানা উদ্ভাবনী চমকে কোটি মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার অন্যতম সুযোগ। তা হাতছাড়া করতে চাইছেন না কেউই। মহাকুম্ভ যেভাবে গোটা ভারতবর্ষকে এক ভূমিতে টেনে আনে, তাতে আধ্যাত্মিক চর্চার পাশাপাশি তা সাংস্কৃতিক চর্চারও বৃহত্তর পরিসর। সুতরাং ব্র্যান্ড প্রমোশনের জন্য যে জনবৈচিত্র দরকার, তা যেন খুব সহজেই তৈরি হচ্ছে এখানে। আর সেই সুযোগটিকেই পুরোমাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের ব্র্যান্ড চেনানোর কাজ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না সংস্থাগুলো। কুম্ভের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এমন সব কাজের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে ব্র্যান্ডের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্তি গড়ে ওঠে। তাতে ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়বে, তেমনই ভবিষ্যতে ব্যবসার রাস্তাও খুলবে। যেমন, ডেটলের তরফ থেকে চলছে ক্যাম্পেন ‘ডেটল বনেগা সুস্থ্ ইন্ডিয়া’। ১৫০০০ হাজার সাফাইকর্মিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
:আরও শুনুন:
অমৃতকুম্ভের সন্ধানে… ঘরে বসেই শামিল হওয়া যাবে কুম্ভমেলায়, কীভাবে?
এ ছাড়া ২৫টি সেক্টর জুড়ে বহু প্রতিনিধি ছড়িয়ে আছেন, যাঁরা তীর্থযাত্রীদের সাহায্য করছেন, এবার একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সেই সূত্রে ডেটলের গুরুত্বের কথাও বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সংস্থার দাবি, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলার জন্য যে পরিসর দরকার, কুম্ভের থেকে ভালো জায়গা আর হয় না। প্রায় একই রকম ভাবে মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার কাজ করছে আর এক বিখ্যাত ব্র্যান্ড কোকা-কোলা। তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি মেলাকে বর্জ্যমুক্ত করে তোলার প্রয়াসে এই সংস্থার কর্মসূচি হল ‘ময়দান সাফ’। এখানে বর্জ্য সরানো বা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, এবং আগত পুণ্যার্থীদের তাতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কুম্ভ জুড়ে যে পবিত্রতার বাতাবরণ, তা যেন এই ক্যাম্পেনের জন্য আরও সহায়ক হয়ে উঠেছে। আবার ধর্মসাধনা বা আধ্যাত্মিকতার চর্চা খুলে দিয়েছে আইটিসি-র মতো সংস্থাকে ধূপ বা পূজাসামগ্রীর পণ্য প্রচারের রাস্তা।
:আরও শুনুন:
কুম্ভমেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাইবোন! মিথ্যে হবে প্রচলিত প্রবাদ, ঠিক কী ব্যবস্থা করছে প্রশাসন?
কয়েকটি মাত্র নমুনা থেকেই আভাস মিলছে যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কুম্ভের গুরুত্ব ঠিক কতখানি। তথ্য বলছে, প্রচার ও বিপণ্নে সংস্থাগুলো প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা খরচ করছে এবারের মেলায়। একাধিক সংস্থা, এবং বহু উদ্ভাবনী কাজে কুম্ভে আসা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ। আদতে ধর্মীয় মেলা হলেও তাই কুম্ভ শুধু সেই সীমাতেই আটকে থাকছে না। বরং একে অর্থনীতি ও ব্র্যান্ড-ভ্যালু বাড়ানোর মিলনমেলা বললেও, বোধহয় ভুল কিছু বলা হবে না।