১৪৪ বছরের অপেক্ষা শেষে, প্রয়াগে মহাকুম্ভের আয়োজন। এতটুকু খামতি রাখতে নারাজ প্রশাসন। নিরাপত্তায় বিশেষ জোর দিচ্ছে যোগী সরকার। সেই সঙ্গে মহাস্নানের আয়োজনেও আলাদা ব্যবস্থা। কিন্তু এই বিশেষ বা আলাদা ব্যবস্থা পছন্দ নয় শঙ্করাচার্যের। কুম্ভমেলার ভিআইপি আয়োজন নিয়ে কী বললেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গঙ্গাস্নানের ভিআইপি পাস! শুনতে অবাক লাগলেও কুম্ভমেলায় এমনটাই হচ্ছে। তৈরি হয়েছে আলাদা ঘাট, তাতে স্নান করবেন স্রেফ বিশেষ বিশেষ মানুষজন। রাজনৈতিক নেতা থেকে ধর্মগুরু, এঁরাই মূলত সেইসব ঘাটে নামার সুযোগ পাবেন। কিন্তু এই ব্যবস্থা কোনওভাবেই মানতে পারছেন না উত্তরাখণ্ডের শংকরাচার্য স্বামী অবিমুক্তেশ্বরানন্দ।
এর আগে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়েও আপত্তি তুলেছিলেন শঙ্করাচার্যরা। এমনকি মন্দির প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে অংশও নেননি তাঁরা। দাবি ছিল, এই অনুষ্ঠান শাস্ত্রবিরোধী। এবার কুম্ভ মেলা নিয়েও আপত্তি তুললেন এক শঙ্করাচার্য। অবশ্য মেলা বা এঁর ধর্মীয় আবেগ নিয়ে কোনও মন্তব্য় তিনি করেননি। তাঁর আপত্তি প্রশাসনের করা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে। আসলে, এবারের কুম্ভমেলায় ভিআইপি ঘাট হিসেবে বিশেষ স্নানের জায়গা তৈরি করা হয়েছে। প্রয়াগে গঙ্গাবক্ষে ওই বিশেষ ঘাটে নামার অধিকার নেই সাধারণ কারও। সেখানে স্নান করবেন স্রেফ বিশেষ ক্ষমতাশালীরা। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের শংকরাচার্য স্বামী অবিমুক্তেশ্বরানন্দের মতে, এই কুম্ভে কেউ বিশেষ নয়। সকলেই সমান। এখানে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য সাধনা। গঙ্গাস্নান করে নিজেকে শুদ্ধ করা, পবিত্র করা। সমাজের তৈরি করা বিভেদ সেখানে মান্যতা পাবে না কোনওভাবেই। আর সেই কারণেই এই মেলায় কোনও ভিআইপি ব্যবস্থা থাকতে পারে না। বিশেষ করে গঙ্গাস্নানের জন্য তো নয়-ই।
চলতি বছরে কুম্ভের শুরুতেই এই শঙ্করাচার্য হাজির হয়েছেন প্রয়াগে। সেখানে তাঁর সঙ্গে রয়েছে আরও অনেক সাধু। তাঁকে ঘিরে থাকছেন ভক্তরা। তাঁর কাছে নানা প্রশ্ন নিয়ে হাজির হচ্ছেন সাংবাদিকরাও। এমনই এক সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে অবিমুক্তেশ্বরানন্দকে প্রশ্ন করা হয়, কুম্ভের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে তিনি খুশি কি না! উত্তরে, বিশেষ শব্দটিতেই আপত্তি জানিয়েছেন তিনি। এই মেলায় তিনি এসেছেন তপস্যা করতে, এমনটা সাফ জানিয়েছেন। নিজেই উল্লেখ করেছেন কুম্ভের ওই বিশেষ ঘাট যা ভিআইপি ঘাট হিসেবে পরিচিত, তা একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। মা গঙ্গার কাছে সবাই সন্তানসম। কেউ বড় কেউ ছোট নয়। তিনি নিজেও দলিতদের সঙ্গে গঙ্গাস্নান করেন, দাবি শঙ্করাচার্যের। মায়ের কাছে যেমন সব সন্তান সমান, তেমনই গঙ্গাস্নানের ক্ষেত্রেও কেউ বিশেষ সুবিধা পেতে পারে না, মনে করছেন উত্তরাখণ্ডের শংকরাচার্য স্বামী অবিমুক্তেশ্বরানন্দ।