রাজনীতিতে পালাবদল আসতেই পারে। তা যে কোনও দেশের ইতিহাসের পক্ষেই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে, প্রশ্ন হল, তাতে সাধারণ মানুষের সামগ্রিক অবস্থার উন্নতির হচ্ছে কি-না! আগামী দিনে তা কোনদিকে গড়ায় তার উপরই হয়তো নির্ভর করছে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ।
হাসিনার পতন থেকে ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এই সময়ে ঠিক কেমন আছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ? সে-দেশের ভিতর ঘনিয়ে ওঠা ক্ষোভ অন্তত জানান দিচ্ছে যে, সাধারণ মানুষের অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। বরং সরকারি সিদ্ধান্তের দরুন নতুন নতুন সংকট দেখা দিচ্ছে। মানুষের সমস্যার দিকে যে বর্তমান সরকারের নজর নেই, এমনটাই অন্তত অভিযোগ। সে-দেশের কমিউনিস্ট পার্টি ইতিমধ্যেই নানা জনবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।
টিসিবি-র ট্রাক সেল বন্ধ। ৪৩ লক্ষ পরিবারের কার্ড বাতিল। শতাধিক পণ্যের উপর ভ্যাট বৃদ্ধির দরুণ জনগণের কাঁধে বেড়েছে আর্থিক বোঝা। মূলত এই কারণেই সে-দেশের নাগরিকদের একাংশের মধ্যে ঘনিয়ে উঠেছে ক্ষোভ। অভিযোগ, এই সিদ্ধান্তের দরুন সাধারণ মানুষের উপর বেড়েছে অপ্রত্যক্ষ্য করের বোঝা। দেশে জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন হলে, ধনিক শ্রেণির উপর কর বসানো যেতে পারত। তা না কর সাধারণ মানুষকে কেন সমস্যায় ফেলা হল, সেই প্রশ্নই উঠেছে বাংলাদেশে। এই সিদ্ধান্তের দরুণ যেমন উৎপাদন ব্যাহত হবে, তেমনই বেকারত্ব বাড়ারও আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এই প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি অর্থাৎ সিপিবি-র সাফ কথা, সরকারের এই লক্ষণ স্বৈরাচারেরই। সরকার স্বৈরাচারীর পথে হাঁটছে বলেই জানিয়েছেন সিপিবি-র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, এবং তাঁর দাবি, দেশের মানুষ তা দেখতে চায় না। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, এই জনবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যে সে-দেশে বিক্ষোভ সমাবেশও হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্তে সে দেশের মানুষ যে খুশি নন, তারই যেন সাক্ষ্য দিচ্ছে এই ধরনের কর্মসূচি।
তবে সরকার পক্ষের দাবি, এই ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে জনগণের উপর কোনও প্রত্যক্ষ্য প্রভাব পড়ছে না। তা ছাড়া পালাবদলের পর দেশ চালনা করার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সরকার সেই পথেই হেঁটেছে। তবে সরকারের এই বক্তব্যকেই নস্যাৎ করেছে সিপিবি। তাঁদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেন রসিকতাই করছে সরকার। বরং গরিব মানুষের স্বার্থের দিকে নজর দেওয়াই এখন জরুরি ছিল। সরকারি এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে যে বিশ্ব ব্যাঙ্কের ভাবনা আছে, এমনটাও মনে করছে সিপিবি। আগামী ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি গণতন্ত্র অভিযাত্রা কর্মসূচিরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
রাজনীতিতে পালাবদল আসতেই পারে। তা যে কোনও দেশের ইতিহাসের পক্ষেই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে, প্রশ্ন হল, তাতে সাধারণ মানুষের সামগ্রিক অবস্থার উন্নতির হচ্ছে কি-না! ইউনুস সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে সে দেশের মধ্যেই যে ক্ষোভের ইঙ্গিত মিলছে, তাতে অনুমান করা যেতে পারে যে, সাধারণ মানুষ ও সরকারের সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট দ্বন্দ্ব আছে। আগামী দিনে তা কোনদিকে গড়ায় তার উপরই হয়তো নির্ভর করছে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ।