৯০ ঘণ্টা কাজ করার কথা নিয়ে বিতর্ক সারা জায়গায়। তবে বেশিক্ষণ কাজ করলেই কি জীবনে মিলবে সাফল্য? নাকি সাফল্যের মন্ত্র অন্য কিছু? জীবনে সফল শাহরুখ খান কী বলছেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মায়ানগরীতে তিনি এসেছিলেন স্বপ্ন নিয়ে। আজ তিনি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। বলিউডের বাদশা। হ্যাঁ, এ কথা সবাই জানেন, শাহরুখ খান হয়ে ওঠা সহজ নয়। তীব্র প্রতিযোগিতার পৃথিবীতে আত্মপ্রতিষ্ঠা সহজ নয়। তাই কিং খান যদি সাফল্যের অন্য নাম হয়ে থাকে, তাহলে সবার আগে মনে রাখতে হবে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা। কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। তাহলে কি ৯০ ঘণ্টা কাজের যে প্রস্তাব, সেখানেই রাখা সাফল্যের সিঁড়ি? খোদ শাহরুখের পরামর্শ অবশ্য অন্য কিছু।
৭০ ঘণ্টা বা ৯০ ঘণ্টা কাজের দাবি যখন জানাচ্ছে কর্পোরেট সংস্থার শীর্ষকর্তরা, স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শ্রমিকের অধিকার নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে কাজ আর জীবনের ভারসাম্য নিয়েও। অনেকটা সময় জুড়ে কাজ করলেই যে ভালো কাজ হবে, তার তো কোনও মানে নেই। তাতে সৃষ্টিশীলতা বাড়বে, এমন ধারণাও ঠিক নয়। তবু এই কাজের সময় নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে চর্চা ঘনিয়ে উঠছে। এই নিরিখেই জীবনে অত্যন্ত সফল ব্যক্তি হিসাবে শাহরুখ খানের পরামর্শ আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে। যিনি নিজের পরিশ্রমে তাঁর সাম্রাজ্য রচনা করেছেন, তাঁর সাফল্যের মন্ত্র অন্য অনেককে যে প্রাণিত করবে তা বলাই যায়। তা কী পরামর্শ দিয়েছিলেন কিং খান? তাঁর সাফ কথা, জীবনে যদি সফল হতে চাও, তাহলে প্রথমেই আরামের মামলা ছাড়তে হবে। একদম চাঁচাছোলা ভাষাতেই তিনি জানিয়েছিলেন, ওসব খাওয়া-ঘুমের শৌখিনতা ছাড়ো। জীবনে যদি সফল হতে চাও, তাহলে নিজেকেই চ্যালেঞ্জ করো। অর্থাৎ তিনি স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে। এই স্থিতাবস্থা আসলে মানুষের ‘কমফোর্ট জোন’। যা ছেড়ে চট করে সহজে কেউ বেরোতে চান না, আর চান না বলেই নতুন কোনও কিছুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন না। ঠিক এখানেই আঘাত করতে চাইছেন শাহরুখ। আরামের সহজ রাস্তা ছেড়ে তিনি তরুণ প্রজন্মকে বেরিয়ে আসতে বলছেন। এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে পরিশ্রমের বার্তা। শাহরুখের মতে, নিজেকে চাপের মুখে ঠেলে দিয়েই কেউ আবিষ্কার করতে পারেন সাফল্যের সিঁড়ি। প্রায় একই কথা শোনা যায় আর এক সফল ব্যক্তিত্ব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাতেও। চাপের মুখেই যে সেরা পারফরমেন্স বেরিয়ে আসে, এই বার্তা কত্থায় কথায় তিনিও দিয়েছেন বহুবার।
আরও শুনুন: ‘বেটেকো হাত লাগানে সে পহলে…’, ‘জওয়ান’ শাহরুখের সংলাপ ভারতীয় সংস্কৃতিতে আঘাত!
কিন্তু ৯০ ঘণ্টা কাজের যে নিয়মবাঁধা প্রস্তাব, তা থেকে শাহরুখের পরামর্শ অনেকটাই আলাদা। শাহরুখ কিন্তু কখনই কাজ আর জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করতে বলছেন না। বলছেন না, অনর্থক ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে যেতে। বরং বলছেন, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার কথা। বলছেন, স্যাক্রিফাইসের কথা। নিজের চেনা গণ্ডি না ছাড়ালে যে সাফল্যের বৃহত্তর পরিধি স্পর্শ করা যায় না- এই তাঁর মূলমন্ত্র।
যদিও সাফল্যের কোনও ছকবাঁধা পথ হয় না। তবু নিজেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা আর লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যাওয়ার নানা পথই হতে পারে। সে-পথ খুঁজে নিতে হয় নিজেকেই। ৯০ ঘণ্টা কিংবা ৯ ঘণ্টার বাঁধা বিতর্কে বোধহয় সে-পথের দেখা সেভাবে মেলে না।