স্ত্রীর দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন! কটাক্ষের সুরে এমনই প্রশ্ন করেছেন শিল্পপতির। তাঁর দাবি, বাড়িতে না থেকে কাজে যোগ দিন কর্মীরা, সপ্তাহের অন্যান্য দিন তো বটেই, বাদ রাখার প্রয়োজন নেই ছুটির দিন বা রবিবার। ঠিক কী বলেছেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৯০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। রবিবারও যেতে হবে অফিস। এমনটাই দাবি এল অ্যান্ড টি (L&T)-র চেয়ারম্যান এস এন সুব্রাহ্মণের। একথা শুনে অনেকেই হয়তো তেমন অবাক হবেন না, কারণ প্রায় একই সুরে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের নিদান দিয়েছিলেন ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তি। তবে স্রেফ এইটুকু বলে সুব্রাহ্মণ থামেননি। ছুটির দিনেও কাজের প্রসঙ্গে এমন এক উদাহরণ টেনেছেন, যা শুনলে অবাক হতেই হয়!
ঠিক কী বলেছেন?
চাকুরিজীবীদের কাছে তাঁর প্রশ্ন, বাড়িতে বসে তাঁরা কী এমন করছেন! অবশ্য এক্ষেত্রে স্রেফ চাকুরিজীবী বলা ভুল, সুব্রাহ্মণ প্রশ্ন করেছেন পুরুষদের। কটাক্ষের সুরে বলেওছেন, “আর কতক্ষণ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকবেন?” সরাসরি না বলেও তিনি যেন বুঝিয়েছেন, কোনও পুরুষ বাড়িতে থাকলে তাঁর একটাই কাজ, স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বসে থাকা! আর এখানেই যত সমস্যা। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত পুরুষতান্ত্রিক। শুধু তাই নয়, এইভাবে কারও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কটাক্ষ করার এক্তিয়ারও বোধহয় অন্য কারও থাকে না। কোনও সংস্থা একজন কর্মীকে নিয়োগ করে নির্দিষ্ট বেতনের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করানোর শর্তে। সেখানে ছুটি থাকা আবশ্যক। আর সেই ছুটির দিনে সংস্থার কোনও কাজ করতে ওই কর্মী দায়বদ্ধ নন। অথচ এই ছুটি নিয়েই যত আক্ষেপ সুব্রাহ্মণের। তিনি নিজেও নাকি রবিবার কাজ করেন। তাই তাঁর সংস্থার কর্মীরাও সপ্তাহে রোজ কাজ করুন, এমনটাই চেয়েছেন। এর আগে একইভাবে ৭০ ঘণ্টা কাজের কথা বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নারায়ণ মূর্তি। বেজায় বিতর্ক হয়েছিল তাঁর সেই তত্ত্ব নিয়ে। কেউ পক্ষে কেউ বিপক্ষে, না ধারণায় ভরেছিল সোশাল মিডিয়া। সুব্রাহ্মণও কার্যত সেই পথেই হাঁটতে চাইলেন, আরও একধাপ এগিয়ে নিদান দিলেন ৯০ ঘণ্টা কাজের, কিন্তু কথা প্রসঙ্গে এমন এক পুরুষতান্ত্রিক মন্তব্য করে বসলেন, যা প্রশ্নের মুখে ফেলল শিল্পপতিকে।
পুরুষমানুষ হয়ে জন্মেছ, বাড়িতে থেকে কী করবে? এমন কথা অচেনা নয়। সিনেমা-সিরিয়ালে তো বটেই, বাস্তবেও অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে অনেকে এমন বাণী আউড়ে থাকেন। উদ্দেশ্য, বাড়ির পুরুষ সদস্যটিকে কাজে পাঠানো। আবার পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেওয়া, বাড়িতে থাকা যেন স্রেফ মেয়েদের কাজ। একেবারে সেই আঁচই মিলল সুব্রাহ্মণের কথায়। কাজের মান বৃদ্ধি করতে একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক তাঁর অধীনে থাকা কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতেই পারেন, তবে তার ধরন এমনটা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। সোশাল মিডিয়ায় এই নিয়ে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, সেখানেও এই তত্ত্বও ঘুরে ফিরে এসেছে। সামগ্রিকভাবে এল অ্যান্ড টি (L&T)-র চেয়ারম্যানের ভাবনা যে ভুল, তা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে নেটদুনিয়া।