একজন আইটি কর্মী মাসে অন্তত ১ লক্ষ টাকা রোজগার করবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। তার উপর চাই নিজের বাড়ি ও গাড়ি। আইটি-তে কর্মরত পাত্রদের নাকি এভাবে যোগ্যতার পরিচয় দিতে হচ্ছে বিয়ের বাজারে। অন্তত জনৈক উদ্যোগপতির তা-ই দাবি।
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে, জানতে চাও সে কেমন ছেলে? এ প্রশ্নের উত্তরে আর যোগ্য পাত্রের হাজার গুণাগুণ কেউ নাকি জানতেই চান না। স্রেফ জানতে চান, পাত্রের বেতনের অঙ্ক। আর তাতেই নাকি কিঞ্চিৎ ফাঁপরে পড়েছেন আইটি কর্মীরা। কনেপক্ষের আশা, পাত্র যখন আইটি-তে তখন বেতনের অঙ্কও বেশ ভালোই হবে। তা কত হতে পারে? নিদেনপক্ষে ১ লক্ষ! এদিকে একজন তরুণ আইটিকর্মী হুট করে এমন অঙ্কের বেতনে পৌঁছবেন কী করে? এই নিয়েই খানিক ঊষ্মা প্রকাশ করেছেন উদ্যোগপতি বিনীত. কে। তাঁর একটি পোস্ট ঘিরে আলোচনায় সরগরম নেটপাড়া।
আরও শুনুন: ভালোবাসায় লজ্জা কীসের! দ্বিতীয়বার মায়ের বিয়ে দিয়ে নজর কাড়লেন পাকিস্তানের যুবক
আগের প্রজন্মকে রীতিমতো একহাত নিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, একজন আঠাশ বা ত্রিশ বছরের ছেলের জন্য প্রত্যাশার যে মাপকাঠি খাড়া করা হচ্ছে তা অবাস্তব। এই বয়সের একজন আইটি কর্মী মাসে অন্তত ১ লক্ষ টাকা রোজগার করবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। তার উপর চাই নিজের বাড়ি ও গাড়ি। আইটি-তে কর্মরত পাত্রদের নাকি এভাবে যোগ্যতার পরিচয় দিতে হচ্ছে বিয়ের বাজারে। অন্তত এই উদ্যোগপতির তা-ই দাবি। আর তাঁর বক্তব্য, যা যা চাওয়া হচ্ছে, তা আগের প্রজন্মের একজন সারা জীবন চাকরি করে হয়তো অর্জন করেছেন। অবসরের পর এই পরিমাণ সম্পদ একজনের হাতে এসেছে। সেখানে এখন চাকরিজীবনের শুরুতেই একজনের কাছে একই জিনিসের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর তাই এই মনোভাবের বদল জরুরি বলেই মত তাঁর।
Salary expectations of groom during wedding matches is insane … <1L / month are not even being considered if person is in IT
Mindset of parents requires RESET. How can 28 year old earn 1-2L, have own car and a house ??
Your generation had all these for retirement#Life
— Vineeth K (@DealsDhamaka) January 6, 2025
এই বক্তব্যই রীতিমতো শোরগোল ফেলেছে নেটদুনিয়ায়। ভারতীয় সমাজে বিয়ে আর অর্থনীতি যে একে অন্যের সঙ্গে জড়িয়ে তা অনস্বীকার্য। এক সময় অর্থনৈতিক চাপ থাকত কনেপক্ষের উপরই। তাও কি অর্থনীতির সাম্য মেনে হত! মোটেও না। বরং সেখানে শোষণের মনোভাবই প্রকট ছিল। সময় পালটেছে। তার দরুণ কি হাওয়া খানিক ঘুরেছে! অনেকে তা অস্বীকার করছেন না। তবে, কাঠগড়ায় উঠেছে দেখাশোনা করে বিয়ে অর্থাৎ অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ পদ্ধতিটিই। তা বরাবর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক চাপকেই স্বীকৃতি দেয় বলে মনে করছেন অনেকে। পাত্র বা কনে, উভয় পক্ষকেই সময় সময় এই চাপ মাথায় নিয়ে চলতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক অসাম্যের স্পষ্ট ছাপ পড়ছে এই ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে। অনেকে তাই উদ্যোগপতির বক্তব্যের সঙ্গে সহমত। তাঁদের দাবি, যে প্রত্যাশা খাড়া করা হচ্ছে তা অবাস্তব। পালটা অনেকে বলছেন, দেশে সাধারণ জীবন নির্বাহের খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা এর থেকে অনুমান করা যায়। বড় শহরে এর থেকে কম খরচে একজন দম্পতি থাকবেন কী করে? তাই হয়তো বিয়ের বাজারে এরকম প্রত্যাশা কনের পক্ষের। আদতে তরুণ দু’জন মানুষের ভালো থাকার কথা ভেবেই তাঁরা এই দাবি করছেন বলে অনেকে পালটা যুক্তি সাজিয়েছেন।
তবে যুক্তি-পালটা যুক্তির বাইরে একটি কথা পরিষ্কার। এখনকার দিনেও বিয়ে কেবল দু’জন মানুষের একসঙ্গে থাকা, বা কেবলমাত্র তাঁদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। আধুনিক সময়েও সমাজ ও অর্থনীতি যে নতুন বেশে পুরনো চাপ বজায় রেখেছে, তা হয়তো বলাই যায়।