একটি প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরছে, তা হল, এই ভাইরাস কি কোভিডের থেকেও বিপজ্জনক? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কথা ঠিক যে, এখনও সেই অর্থে প্রতিরক্ষার ভ্যাকসিন কিছু নেই। তবে তা যে মারাত্মক বিপদ ঘটাবে, এমন আশঙ্কা করাও অমূলক। বরং কোভিডের সময় সংক্রমণ এড়াতে মানুষ যা যা শিখেছে, তা কাজে লাগিয়েই এই ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দেওয়া যায়।
HMPV অর্থাৎ হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস। এই মুহূর্তে সাধারণ জনজীবনে তা যেন আতঙ্কের অন্য নাম। কেননা করোনার গ্রাস থেকে সবে মুক্তি পেয়েছে সভ্যতা। ভাইরাসের আক্রমণ শুনেই ফিরে ফিরে আসছে পুরনো সব স্মৃতি। আবার কি তবে সেই সব অসহ দিন ফিরতে চলেছে? ভাইরাসের খবর যত ছড়াচ্ছে তত এই ধরনের চিন্তাই যেন মানুষকে আচ্ছন্ন করছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে এখনই এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এ-রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন। অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে যে কোনও বিপদে মানুষের পাশে থাকার জন্য প্রশাসন যে তৈরি তাও তিনি নিশ্চিত করে দিয়েছেন।
সাধারণ মানুষের কাছে চিনা ভাইরাস হিসাবেই পরিচিতি পেয়েছে এই HMPV, তবে সত্যিই কি এর উৎস চিন? অনেকের মনেই আছে সেই খটকা। ভাইরাসের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, HMPV আদতে নতুন ভাইরাস নয়। ১৯৭০-এর দশকেই তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তখনও এটিকে আলদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ২০০১ সালে হয় সেই চিহ্নিতকরণ। চিনে নয়, নেদারল্যান্ডসে ধরা পড়ে এই ভাইরাস। সাধারণ ঠান্ডা লাগার যে উপসর্গ, এই ভাইরাসের সংক্রমণে তাই-ই থাকার দরুন প্রথমে এটিকে আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে ডাচ বিজ্ঞানীরা প্রায় দু’দশক গবেষণা করে এই ভাইরাসের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করেন। তাঁরাই তৈরি করেন এর জিনোম সিকোয়েন্স। মোটের উপর মেটানিউমোভাইরাস গোত্রের হলেও, এর চরিত্র খানিকটা আলাদা। সেই নিরিখেই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস, HMPV হিসাবেই যা পরিচিত। তাহলে চিনা ভাইরাস এটিকে কেন বলা হচ্ছে? সম্প্রতি চিনে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ক্রমে সারা বিশ্বের নানা প্রান্তে যখন একই ভাইরাসের সংক্রমণের খবর আসতে থাকে, তখন ধরে নেওয়া হয় যে, এটির উৎস চিন। বাস্তব তথ্য অবশ্য সে কথা বলছে না। মার্কিন মুলুকেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ নতুন কিছু নয়।
আরও একটি প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরছে, তা হল, এই ভাইরাস কি কোভিডের থেকেও বিপজ্জনক? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কথা ঠিক যে, এখনও সেই অর্থে প্রতিরক্ষার ভ্যাকসিন কিছু নেই। তবে তা যে মারাত্মক বিপদ ঘটাবে, এমন আশঙ্কা করাও অমূলক। বরং কোভিডের সময় সংক্রমণ এড়াতে মানুষ যা যা শিখেছে, তা কাজে লাগিয়েই এই ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দেওয়া যায়। আক্রান্তের কাছাকাছি না আসা, বা যিনি আক্রান্ত তিনি যদি ভিড় এড়িয়ে চলেন, সাধারণ কিছু স্বাস্থ্যবিধি যদি সকলেই মেনে চলেন, তাহলে ভাইরাসের দৌরাত্ম্য মানুষকে খুব একটা কাবু করতে পারবে না।
যদিও আতঙ্কিত না হওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তবু ভয়ের একটা চোরাস্রোত যে বইছে তা অস্বীকার করা যায় না। তবে ভয় না পেয়ে সতর্ক থাকাই শ্রেয়। কে না জানে, সাবধানের মার নেই!