সাংবাদিক খুন! বড় খবর! সংবাদ জগতেও, রাজনৈতিক মহলেও। খুনী ধরার ধুম চারদিকে। তড়িঘড়ি ধরাও পড়ল মূল মাথা। এরপর বিচার হবে, শাস্তি হবে, কিন্তু সাংবাদিকের সুরক্ষা ফিরবে কি?
সাংবাদিক খুন! বড় খবর! সংবাদ জগতেও, রাজনৈতিক মহলেও। খুনী ধরার ধুম চারদিকে। তড়িঘড়ি ধরাও পড়ল মূল মাথা। এরপর বিচার হবে, শাস্তি হবে, কিন্তু সাংবাদিকের সুরক্ষা ফিরবে কি? হলফ করে বলা যাবে, আর একজনও সাংবাদিককে খুন হতে হবে না! উত্তরটা বোধহয় না, কারণ যে দেশের প্রেস ফ্রিডম ইনডেস্ক ১৮০-র মধ্যে ১৫৯, সে দেশে এই প্রশ্ন করাই বৃথা!
সাংবাদিক হত্যা এমন কিছু নতুন ব্যাপার নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তো বটেই, ভারতেও নয়। এর আগে বিভিন্ন কারণে খুন হতে হয়েছে গৌরী লঙ্কেশ, জ্যোতির্ময় দে-র মতো সাংবাদিককে। কখনও রাজনীতি, কখনও দুর্নীতি কখনও আবার খুনের কারণ হিসেবে দেখা গিয়েছে পরিবেশ রক্ষার লড়াই। প্রত্যেকবার হইচই হয়েছে, দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে খুনের কিনারাও হয়েছে, স্রেফ নিশ্চিন্ত হননি সাংবাদিকরা। পেশার তাগিদে হোক বা সত্যান্বেষণের খিদেয়, এতটুকু বেশি জেনে ফেললেই মুশকিল! রাতের অন্ধকারে কিংবা প্রকাশ্য দিবালোকে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে হয়েছে, অকালে।
সম্প্রতি ছত্তিশগড়ে সাংবাদিক মুকেশ চন্দ্রকারকেও দুর্নীতির তদন্ত করার অপরাধে খুন করা হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় এক নিউজ চ্যানেলে কাজ করতেন তিনি। জানা যায়, সুরেশ চন্দ্রকর নামের এক কন্ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে ১২০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। এই নিয়েই তদন্ত করছিলেন মুকেশ। প্রথমে নিখোঁজ, তারপর সেপ্টিক ট্যাঙ্কে উদ্ধার হয় মুকেশের মৃতদেহ। অভিযোগের আঙুল ওঠে কন্ট্রাক্টর সুরেশের দিকে। সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে হইচই পড়ে যায়। তদন্ত শুরু করে সিট। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ে মূল অভিযুক্ত সুরেশ। যথাসময়ে তার বিচার হবে, মিলবে শাস্তিও। এই প্রসঙ্গে রাজনীতি শিবিরেও চর্চা চলেছে। একদিকে দোষীকে তড়িঘড়ি গ্রেপ্তার করে নাম কুড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে শাসকদল, অন্য দিকে ঘটনার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা, তবে যে প্রশ্ন কেউ তুলছে না, তা হল সাংবাদিকের নিরাপত্তা। একা মুকেশ নন, নির্ভীক সাংবাদিকতা যাঁদের নেশা, সেই সমস্ত মিডিয়া কর্মী কি আদৌ সুরক্ষিত?
প্রেস ইনডেস্ক কিন্তু তেমনটা বলছে না। ২০২৪-এর বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ ভারতের অবস্থান ১৫৯। যা পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার থেকেও পরে। ১৮০টি দেশের মধ্যে এত পিছনে নাম থাকার কারণ অবশ্য ভারতে সাংবাদিকের নিরাপত্তা। যে বাক স্বাধীনতার কথা বলে সংবিধান, সেই অধিকার ফলাতে চাইলেই কোপ পড়ে চতুর্থ স্তম্ভে। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় প্রশ্নকর্তাকে। যেটুকু বলতে বলা হচ্ছে তার বাইরে একটা শব্দ বলাও অপরাধ। অলিখিত এই নিয়ম ভারতে নতুন নয়। প্রেস ইন্ডেক্সের সমীক্ষায় সেই প্রমাণ মিলেছিল। সেই সময় থেকে যদি বদল আনার চেষ্টাটুকুও করা হত, তাহলে হয়তো অকালে প্রাণ হারাতে হত না মুকেশের মতো সাংবাদিককে। যা কিছু সত্যি তা জানার অধিকার রয়েছে সকলের। জানানোর দায়িত্ব সাংবাদিকের। সেই কাজে বাধা এলে সমস্যা। তবে এই হারে সাংবাদিকের মৃত্যু বারেবারে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে দেশের পরিস্থিতিকে। বর্তমানে যে হইচইটা হচ্ছে মুকেশের মৃত্যু নিয়ে, সেই একই রকমের হইচই কেন হয়নি প্রেস ইনডেক্সের রিপোর্ট দেখে, সেই প্রশ্নই তুলছে ওয়াকিবহাল মহল।