সারা বছর স্কুল খোলা। ছুটি নেই একদিনও। তবু আপত্তি নেই। হাসিমুখে স্কুল যায় পড়ুয়ারা, হাজির থাকেন শিক্ষকরাও। শুধু পড়া নয়, সঙ্গে চলে আরও অনেক কিছুই। কোথায় রয়েছে এমন স্কুল? সারাবছর তা খোলা রাখার কারণটাই বা কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কারও বয়স ৬, কারও আরেকটু বেশি, এদের প্রত্যেকেই দুই হাতে লিখতে জানে। তাও আবার আলাদা আলাদা ভাষা। ১ থেকে ১০০০ অবধি নামতা মুখস্থ। গড়্গড়িয়ে বলে দিতে পারে সংবিধানের প্রস্তাবনা। দেশের প্রায় সব হাইওয়ে, নদী, পর্বতের নাম ঠোঁটের ডগায়। কী ভাবছেন কোনও সিনেমার কথা বলছি? একেবারেই নয়, বাস্তবেই রয়েছে এমন এক স্কুল যেখানকার প্রায় সব পড়ুয়াই এমন আশ্চর্য।
যদিও, এই ক্ষমতা তাদের জন্মগত নয়। নিয়মিত অভ্যাসের জোরেই তৈরি হয়েছে। আর সেই অভ্যাস তৈরি করেছে তাদের স্কুল। মনে হতেই পারে, এরা নামীদামী কোনও স্কুলের পড়ুয়া। তাও নয়, একেবারে গ্রামের সাধারণ স্কুলেই এমন পাঠ দেওয়া হয়। কথা বলছি, মহারাষ্ট্রের নাসিকের হিওয়ালি গ্রামের জিলা পরিষদ স্কুল সম্পর্কে। এই স্কুল সারাবছর খোলা থাকে। শিক্ষকদেরও ছুটি নেই। ক্লাস হয় ১২ ঘন্টা। তাতে আপত্তি তোলে না কেউই। কারণ স্রেফ বইয়ের পড়া এখানে হয় না, বরং জীবনে বড় হওয়ার পাঠ সেখানো হয় পড়ুয়াদের। আগামীতে চলতে গেলে ঠিক কোন কোন অভ্যাস নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে, সেই সবকিছু এখানকার পড়ুয়ারা ছোট থেকেই বুঝে নেয়। সৌজন্যে স্কুলের শিক্ষকরা। অবশ্য স্কুলে যে একাধিক শিক্ষক রয়েছেন তা নয়, কৃতিত্ব মূলত একজনের। তাঁর নাম কেশব গাভিত। এঁর একার চেষ্টাতেই এই স্কুলের পড়ুয়ারা এমন অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছে। দিনরাত এক করে পড়ুয়াদের নতুন কিছু শেখানোর চেষ্টা করেন কেশব। সবসময় বই পড়ে শেখা যায় না, তাই স্কুলের দেওয়ালে, সিঁড়িতে আশেপাশে সর্বত্র লেখা থাকে পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিস। নামতা থেকে পিরিয়ডিক টেবল সবকিছুই শেখানো হয়েছে ওইভাবে।
তাইতো কেউ আইএএস অফিসার, কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়র, কেউ আবার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এই স্কুলে পা রাখে। এদের অনেকের বাড়িতেই বিদ্যুৎ নেই। অনেকটা পথ পেরিয়ে স্কুলে আসতে হয়। তবু কামাই নেই। কারণ, পড়াশোনার নামে অত্যাচার নয়, ভালোবাসা বিলি করে এই স্কুল। লকডাউনের সময়ও এই স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল মাত্র ১ সপ্তাহ। আসলে এখানের স্থানীয় কেউ ওই সময় বাইরে যাননি, বাইরে থেকে কেউ আসেওনি, তাই কোভিডের আশঙ্কা বা ভয় ছিল না। তাই স্রেফ নিয়মের দোহাই দিয়ে স্কুল বন্ধ রাখার কোনও মানে ছিল না। সবমিলিয়ে এই স্কুল যে আলাদা নজর কাড়তেই পারে তা বলাই বাহুল্য। আগামীদিনে তা সত্যি সত্যিই হবে তাও হলফ করে বলছেন স্থানীয় অনেকেই।