দেশের লক টাউন! সরকারি খাতায় এমন পরিচয় নেই, তবে চাইলেই এই শহরকে এমন নাম দেওয়া যেতে পারে। কারণটাও সহজেই অনুমেয়, এই শহরের প্রায় বাসিন্দাই তালা তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। তবে এবার শুধু তালা নয়, আদরের রামলালা গড়েও নজর কাড়ছে সেই আলিগড়। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রামমন্দিরে ঝুলবে ৮ ফুটের তালা! অযোধ্যার মন্দির উদ্বোধনের আবহে এই খবর বেশ হইচই ফেলেছিল। সুদূর আলিগড় থেকে সত্যি সত্যি এসেছিল ওমন রাক্ষুসে তালা। যা তৈরি করেছিলেন সেই শহরেরই এক বাসিন্দা। রামমন্দির প্রতিষ্ঠার বর্ষপূর্তিতে ফের চর্চা সেই আলিগড়। এবারের উপলক্ষ্য অবশ্য তালা নয়, বরং খোদ রামলালা।
আসলে, স্রেফ তালা নয়, আলিগড় প্রসিদ্ধ পিতলের জিনিসপত্র তৈরিতে। যেহেতু পিতলের তালার চাহিদা বেশি তাই এখানে তালা তৈরির চল রয়েছে। তবে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা আলিগড়ের পিতল শিল্পে বিপ্লব এনেছে বলা যায়। রামলালার আদলে ছোট মূর্তি গড়ার আবদার এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে শিল্পীরা যোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। কোনওটা একেবারে ছোট, কোনওটা মাঝারি কোনওটা আবার আকারে বড়, যে কোনও মাপের যে কোনও ছাঁচের মূর্তি গরে দিতে এঁরা ওস্তাদ। রামলালার মূর্তি যখন প্রথমবার প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল তখন অনেকেই ভেবেছিলেন এমন অসাধারন কারিগরি অনুকরণ সম্ভব নয়! কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি একেবারেই। বরং বাজারে ভরে গিয়েছে ছোট ছোট রামলালার মূর্তিতে। মাটি, কাঠ, পাথরের মতো পিতলের মূর্তিও রয়েছে। বরং এই ধাতুর মূর্তির চাহিদাই সবথেকে বেশি। আর সেখানেই ডাক পড়ছে আলিগড়ের শিল্পীদের। আসন্ন কুম্ভ মেলা উপলক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ মূর্তির অর্ডার এসেছে। দিনরাত এক অরে সেসব গড়ছেন তাঁরা।
আলিগড়ের ওই শিল্পীদের কথায়, তালা তৈরিতে নিজস্বতা বলতে কিছু থাকে না। একই ছাঁচে তৈরি করে যাও, সেখানে শিল্পের প্রয়োজন নেই বললেই চলে। কিন্তু মূর্তি গড়া মোটেও সহজ নয়। আলাদা শিল্পীর হাতের কাজ আলাদা হবে। এবং তা মূর্তি দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যাবে। সেখানে তাঁরা নিজেদের শৈল্পিক গুণ দেখাতে পারেন ইচ্ছামতো। তাই বলে তালা তৈরি বন্ধ রয়েছে এমন নয়। পাশাপাশি জোর কদমে চলছে আদরের রামলালার মূর্তি তৈরি। শুধু দেশ নয়, বিদেশ থেকেও আসছে অর্ডার। কোটি টাকা অবধি দামের মূর্তি সাগরপারে পাড়ি জমাচ্ছে। সবই আলিগড়ের শিল্পীদের তৈরি। দেশের শিল্প এইভাবে গোতা বিশ্বে পরিচিতি পাচ্ছে, তা সকলের কাছেই গর্বের বিষয় হয়ে উঠছে। তবে এক্ষেত্রে রামমন্দির তৈরিকে বিশেষ কৃতিত্ব দিতে চান আলিগড়ের ব্যবসায়ী বা শিল্পীরা। যে হারে রামলালার মূর্তি তাঁরা গড়ছেন, তাতে ব্যবসায়িক লাভও মন্দ হচ্ছে না। তাতে আগামীদিনে পিতল শিল্পের ভবিষ্যত আরও সুরক্ষিত হচ্ছে। তাই স্রেফ টাকার জন্য কাজ নয়, ভক্তিভরে আদরের আরাধ্যকে গড়ছেন আলিগড়ের শিল্পীরা।