দেশের জাতীয় ছুটির তালিকা থেকে বাদ পড়ল সাধারণতন্ত্র দিবস। সেই দিনে অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করছেন মহারাষ্ট্র শিক্ষা দপ্তর। কেন করা হল বাতিল? এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে আসল কারণটি ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সাধারণতন্ত্র দিবস কেন ছুটির দিন হিসাবে পরিগণিত হবে? কেনই বা বন্ধ থাকবে স্কুল? এই প্রশ্ন উঠল মহারাষ্ট্রে। শুধু তাই-ই নয়, এই নিরিখে নয়া পদক্ষেপ করল সে-রাজ্যের সরকার। ছুটির দিন হিসাবে না দেখে সাধারণতন্ত্র দিবসকে অন্য ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ফলত, শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী খোলা থাকবে স্কুল। কী কী ধরনের অনুষ্ঠানে মধ্যে দিনটিকে উদযাপন করা হবে, জানিয়ে দেওয়া হল সেই খুঁটিনাটিও।
দেশের জাতীয় ছুটি হিসাবে যে দিনগুলো মর্যাদা পায়, তার মধ্যে একটি হল সাধারণতন্ত্র দিবস। যে সংবিধান দেশের বুনিয়াদ রক্ষা করে তুলেছে, সেই সংবিধানকে সম্মান জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত। পড়ুয়ারা দিনটিকে যে নেহাত ছুটির দিন হিসাবেই দেখে, তা নয়। বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে, যাতে পড়ুয়াদের মধ্যে একতা, সম্প্রীতির বোধ গড়ে ওঠে। কমিউনিটি সেন্স তৈরি হয়, এরকম একাধিক কর্মসূচি পালনের রেওয়াজও আছে সর্বত্র। মহারাষ্ট্র সরকারের মত, এই উদযাপন থাকুক। তবে, তা যেন ছুটির দিনের কর্মসূচির তকমা না পায়। এ বিষয়ে যথাযথ যুক্তিও দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাদপ্তরের জারি করা নির্দেশিকা বলছে, এই দিনে পড়ুয়াদের মনে জাতীয় আবেগ জাগিয়ে তুলতে হবে। দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, অতীতের গৌরব, এবং ভবিষ্যতের রূপরেখা সম্পর্কে তারা যাতে সম্যক ওয়াকিবহাল হতে পারে, সেই মতো আট রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। ঠিক এই কারণেই চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি সমস্ত সরকারি এবং প্রাইভেট স্কুল খোলা থাকবে বলেই জানানো হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
তবে, এই সিদ্ধান্ত সমালোচনার মুখেও পড়েছে। শিক্ষাবিদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, সাধারণতন্ত্র দিবসে উদযাপন যে হয় না, তা তো নয়। তাহলে আবার আলাদা করে দিনভর উদযাপনের কর্মসূচি দিয়ে দিনটিকে পালন করার কথা বলা হচ্ছে কেন? যে আট ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, তা দেশপ্রেমকে মাথায় রেখেই নিতে হবে। প্রভাতফেরি থেকে শুরু করে আঁকা, গান, নাচ, আবৃত্তি ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠান পালন করতে হবে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তুলতে। যে দিনটি এমনিতেই দেশকে চেনা ও জানার, সেই দিনটিকে এমন দেশপ্রেমের বাড়তি আবেগে মুড়ে ফেলার যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকে সরব হয়েছেন। তাঁদের মত, এর ফলে সাধারণতন্ত্র দিবসের উদযাপনে যে স্বতঃস্ফূর্ত খোলামেলা জায়গা ছিল, তা অনেকটা বাধ্যবাধকতায় চলে গেল। তাতে হয়তো নিয়মাফিক কর্মসূচি পালন হবে, তবে নিয়ম পালনের শাসনে সেই প্রাণের সন্ধান কি পাওয়া যাবে? এই প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের। একই সঙ্গে প্রশ্ন যে, মহারাষ্ট্রের উদাহরণ সামনে রেখে কি অন্যান্য রাজ্যেও ক্রমে একই পথে হাঁটবে? সেক্ষেত্রে সাধারণতন্ত্র দিবসের মাত্রা যে অনেকটাই বদলে যাবে, তা বলাই যায়।