একজন শিল্পী তাঁর শিল্প দিয়ে নিশ্চিত মানুষকে মুগ্ধ করবেন। কিন্তু সেটুকুই কি সব! সামাজিক দায়ের জায়গাটা এড়িয়ে গিয়ে একজন শিল্পী কি সত্যিই তার পথ খুঁজে পেতে পারেন! প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও বোধহয় জানাই।
ঠান্ডা পানীয় অস্বাস্থ্যকর। কেন তার বিজ্ঞাপন করবেন শাহরুখ খান? উঠেছিল প্রশ্ন। আর তাতে বাদশার জবাব, যা ক্ষতিকর তাকে নিষিদ্ধ করলেই হয়। সে কাজ তো সরকারের। খামখা অভিনেতাকে কাঠগড়ায় তোলা কেন!
শাহরুখের কথা যুক্তিযুক্ত। এ বোধহয় শুধু তাঁর একার কথা নয়। বরং যাঁরা এই ধরনের পণ্যের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন, তাঁদের সকলের কথা। তবে তাঁর এই জবাব আমাদের সেই পুরনো প্রশ্নটার দিকে আর একবার ঠেলে দেয়। শিল্পীর কি সামাজিক দায় থাকতে নেই? বিশেষত শাহরুখ খানের মতো স্টার, যাঁকে অনুকরণ আর অনুসরণ করেন কোটি কোটি মানুষ তিনি কি নির্বাচিত কয়েকটি কাজ থেকে বিরত থাকতে পারেন না! এ প্রশ্ন বারেবারেই ওঠে। অভিনেতা হিসাবে তিনি যে যুক্তি দিচ্ছেন তা অকাট্য। তবে তাঁর মতো স্টারের যে কিছু সামাজিক দায়ও থেকে যায়, তা অস্বীকার করা যায় না। এমন নয় যে, তাঁর অন্যান্য কাজে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন না। তবে, সামগ্রিক ভাবে যখন জনজীবনের প্রশ্ন ওঠে কোনও পণ্যের খাতিরে, তখন শাহরুখের মতো জনদরদী স্টারের কাছে প্রত্যাশার পারদও চড়ে যায়। এক্ষেত্রে অবশ্য তিনি তা পূরণ করলেন না।
এর পাশেই রাখা যায় কমেডিয়ান কুণাল কামরার উদাহরণ। স্ট্যান্ড-আপ কমেডি জগতে তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। নিজের কনটেন্টে হাসির ছুরিতে ক্ষুরধার রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করেন। তা নিয়ে নানা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরেন না। সেই কুণাল কামরা সম্প্রতি সরব হয়েছেন গিগ কর্মীদের অবস্থা নিয়ে। কুইক কমার্স এবং কুইক সার্ভিসের ভোক্তা আমরা এখন প্রত্যেকেই। আর নতুন বছরের শুরুতে এই বিষয়েই তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর সাফ কথা, কুইক কমার্সের কর্তাব্যক্তিরা যে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করছেন বলে বলা হচ্ছে, তা একেবারেই সত্যি নয়। বরং সত্যি বলতে গেলে, তাঁরা সাধারণ মানুষকে নিদারুণ শোষণ করছেন। এঁদেরকে ভূমিহীন ভূস্বামী বলে চিহ্নিত করেছেন তিনি। সাধারণ মানুষের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে এই কর্তারা যে মানুষকে হেনস্তাই করছেন, তা খোলাখুলিই বলেছেন কুণাল কামরা। কর্মীদের বেতন থেকে চুক্তি- নানা দিকে এই গিগ কর্মীদের অসহায়তা ও এই সার্ভিসের অস্বচ্ছতার কথা তুলে ধরেছেন। আর তাঁর আশা, এই বাড়বাড়ন্তে একদিন নিশ্চিত লাগাম পড়বে।
প্রশ্ন হল, তিনি তো এই কথা বছরের শুরুতে না-ই বলতে পারতেন। কিন্তু একজন কমেডিয়ান হিসাবে সমাজের বিচ্যুতি তুলে ধরা যে তাঁর দায়িত্ব, তা তিনি ভুলে যাননি। আর বছরের শুরুতেই সেই সামাজিক দায় পালন করেছেন। শাহরুখও হয়তো পারতেন। কিন্তু তিনি সে পথ মাড়ালেন না। বরং রসিকতার চলে ঢাল দিয়ে আড়াল করলেন নিজেকে। আর সেই পুরনো প্রশ্নটা আবার জেগে উঠল নতুন বছরে! একজন শিল্পী তাঁর শিল্প দিয়ে নিশ্চিত মানুষকে মুগ্ধ করবেন। কিন্তু সেটুকুই কি সব! সামাজিক দায়ের জায়গাটা এড়িয়ে গিয়ে একজন শিল্পী কি সত্যিই তার পথ খুঁজে পেতে পারেন! প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও বোধহয় জানাই।