দেখতে দেখতে হাজির আরও একটা নতুন বছর! কিছু রয়েছে, কিছু ফুরিয়েছে, সবমিলিয়ে মন্দ কাটেনি বছর। কিংবা যদি মন্দ কাটেও, নতুন করে ভালোর স্বপ্ন দেখছেন সকলেই। কোনও একজন নয়, গোটা বিশ্ব অপেক্ষার প্রহর গুনছে নতুনের। আর সেখানেই হাজির হরেক নিয়মের কিসসা! বর্ষবরণ কোথায় কীভাবে হয়? আসুন শুনে নেওয়া যাক
বছরের মাঝামাঝি শুরু হয়েছে প্রেম। একসঙ্গে বর্ষবরনের সাক্ষী থাকা, এই প্রথম। বিশেষ তো বটেই! উদযাপনটাও তেমনভাবেই করতে হবে! তাই বলে, মাঝরাতে প্রকাশ্যে প্রেমিকার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে নতুন বছরে পা রাখা! সমাজ মেনে নেবে তো? আলবাত মানবে, কারণ এই দেশে এমনটাই নিয়ম।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। জার্মানির লোককথায় এমনই নিয়মের উল্লেখ রয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে তা পালন করেন সে দেশের অনেকে। নিয়ম বলতে, বছর শেষের রাতে ভালোবাসার মানুষের ঠোঁটে ঠোঁট রাখা। উষ্ণ চুম্বনে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া, এইভাবে আগামী সবকটা বছ এক হয়ে থাকবেন দুজনে। হোক না প্রকাশ্যে, রাস্তায়, ক্ষতি কী! নিয়মের বাইরে তো কিছু হচ্ছে না, তাই কেউ আপত্তি তুলবেন না। তবে এই একটা নিয়ম নয়, বিভিন্ন দেশে এমনই নানা নিয়মের চল রয়েছে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর। ইকুয়েডরের কথাই ধরা যাক। সেখানে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় কুশপুতুল দাহ করে। কী ভাবছেন, সেসব তো বিক্ষোভমিছিলে পোড়ানো হয়। হ্যাঁ, তা হয় বটে, তবে ইকুইডরের মানুষ এ ভাবেই নতুন বছরকে স্বাগত জানান। অনেকটা আমাদের ন্যাড়াপোড়ারই মতো। পুরনো, যা কিছু অশুভ তাকে ধ্বংস করে এ ভাবেই নতুনের দিকে এগিয়ে যান তাঁরা। পুতুল তৈরি হয় বাতিল জামাকাপড়, খবরের কাগজ, কাঠের গুঁড়ো এসব দিয়ে।
এর পরেই ডেনমার্ক। এখানে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় কাচের বা চিনেমাটির প্লেট ভেঙে। প্রতিবেশীর বাড়ির সামনে গিয়ে এসব ভাঙতে শুরু করেন তাঁরা। বিশ্বাস, যার বাড়ির সামনে যত প্লেট ভাঙা হবে, নতুন বছর ততই ভাল যাবে তাঁর।
জাপানের বর্ষবরণ বেশ অদ্ভুত। মাঝরাতে বেজে ওঠে একের পর এক ঘণ্টা। অন্তত ১০৮ বার ঘণ্টাধ্বনি হয়। বৌদ্ধ মতে, ওই ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গেই সঙ্গেই সমস্ত দুঃসময়, দুর্বিপাক ও গত বছরের পাপ ধুয়েমুছে যায়। বিশ্বাস, এমনটা করলে নতুন বছর ভালো কাটবে।
দক্ষিণ আমেরিকায় বছর শেষের দিনে হরেক রঙের অন্তর্বাস পরতে হয়। একেকটা রং এক্ষেত্রে একেক রকম সৌভাগ্যের প্রতীক।
চেক প্রজাতন্ত্রের বাসিন্দারা বছরের শেষ দিনে আপেল কাটেন। প্রয়োজন হোক বা না হোক, এমনটা করেন সে দেশের অনেকেই। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই নিয়মের নেপথ্যে ঠিক কী কারণ, তা সঠিকভাবে বলতে পারেন না কেউ। তবে এমনটা করলে বছর ভালো কাটবে, একথা বিশ্বাস করেন সকলেই। ফলের সঙ্গে বর্ষবরনের সম্পর্ক রয়েছে আরও অনেক দেশে। এই যেমন, স্পেনের মানুষজন ১২ খানা আঙুর খেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান।
আবার ফিলিপিন্সের লোকেরা এ দিনটা সাজিয়ে তোলেন নানাবিধ গোলাকার জিনিসে। সে কয়েন হতে পারে, হতে পারে খাবারদাবার বা পোশাক। তবে যাই হোক না কেন, তা হতে হবে গোল। গোলাকার যে কোনও কিছুই তাদের জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক।
ইটালির রীতিটাও বেশ অদ্ভুত! ব্যালকনি কিংবা জানলা থেকে আসবাবপত্র ছুড়ে ছুড়ে ফেলেন তারা। এ ভাবেই নতুন বছর শুরু হয় তাদের।নেপাল বা দক্ষিণ আফ্রিকাতেও রয়েছে এই রীতি।
সবমিলিয়ে বর্ষবরণের রীতি নিয়ে এমনই অদ্ভুত নিয়ম ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে, যা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে চান না অনেকে।