বাংলাদেশে শান্তি ফিরবে কবে? সম্প্রতি এই প্রশ্নের জবাবেই মুখ খুললেন ওপার বাংলার সাংবাদিকরা। অশান্তির আবহে তাদের কলম এবং কন্ঠ্য কীভাবে রোধ করা হচ্ছে, বললেন সেই সবকিছুই। তবে বাংলাদেশে শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটিই উপয়া রয়েছে বলে মত সাংবাদিকদের। ঠিক কোন উপায়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অশান্ত বাংলাদেশ। চরমে পৌঁছেছে সংখ্যালঘু নির্যাতন। বাধ্য হয়েই স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসছেন ওপার বাংলার হিন্দুরা। এক্ষেত্রে নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে ভারতকেই বেছে নিচ্ছেন তারা। জোর করে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকতে চাইছেন এপার বাংলায়। ধরা পড়লে জেলে যেতেও আপত্তি নেই, তবু অশান্ত বাংলাদেশে ফিরতে চান না। কিন্তু এই পরিস্থিতি আর কতদিন? বাংলাদেশ কি আদৌ শান্ত হবে?
ওপার বাংলার সাংবাদিকরা মনে করছেন, অবশ্যই হবে। আগের মতো না হলেও, বর্তমান পরিস্থিতি উন্নতি হবে। ভয় বা আতঙ্কের মধ্যে নয়, শান্তিতে সেখানে থাকতে পারবেন সকলেই। স্রেফ সরতে হবে ইউনুসকে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অপসারণ হলেই শান্তি ফিরবে বাংলাদেশে। মনে করছেন সেখানকার সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীরা।
২০২৪-এর মাঝামাঝি বাংলাদেশে অশান্তির শুরু। হাসিনা সরকারের পতনে, নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। অনেকেই ভেবেছিলেন, যাবতীয় অশান্তি মিটে গিয়ে এবার ফিরবে শান্তি। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি, বরং অশান্তির মাত্রা বেড়েছে আরও কয়েক গুণ। সৌজন্যে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে থাকা অন্তর্বর্তী সরকার। যার মূল উদ্দেশ্য ভারত বিদ্বেষ। এক নয়, একাধিক কাজে সেই উদ্দেশ্য সর্বসমক্ষে প্রতিষ্ঠা করেছেন ইউনুস। অশান্তির আগুনে ঘি ঢালতে শুরু হয় সংখ্যালঘু নির্যাতন। একের পর এক সন্ন্যাসী গ্রেফতারের ঘটনায় উত্তাল হয় বাংলাদেহ। তার প্রভাব ভারতেও পরে। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, অবিলম্বে এই পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে। কিন্তু কোথায় কি! বরং পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়ে ইউনুস যেন প্রমাণ করতে চাইলেন, ভারতের সঙ্গে ঠিক কেমন সম্পর্ক গড়তে চাইছেন তারা। তবে সরকারের এই আচরণে ক্ষুব্ধ সে দেশের সাংবাদিকরা।
সম্প্রতি দিল্লির এক অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গে নিজেদের মতামত জানালেন বাংলাদেশের সাংবাদিকরা। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন মানবাধিকার কর্মীরাও। অনুষ্ঠানের পর সংবাদ সংস্থায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন সাংবাদিক তথা মানবাধিকার কর্মী সীতাংশু গুহ সরাসরি ইউনুস সরকারকে সবকিছুর জন্য দায়ী করেন। বাংলদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল, এমনটা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট হল। সীতাংশুর মতে, বাংলাদেশে শান্তি ফেরানোর জন্য ইউনুসকে ক্ষমতা থেকে সরতে হবে। এর জন্য নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, বর্তমানে বাংলাদেশে এতটুকু গণতন্ত্র অবশিষ্ট নেই। শুধু তাই নয়, ইউনুস সরকারের মদত পেয়ে বাংলাদেশে জেহাদিদের যত্থেচাচার বাড়ছে, এমন অভিযোগও স্পষ্ট হল তাঁর কথায়। প্রায় একই সুরে সরব হলেন বাংলাদেশের সাংবাদিক সুশান্ত দাশগুপ্ত। তাঁর কথাতেও ইউনুস ক্ষোভ স্পষ্ট। তবে এর জন্য সে দেশের মিডিয়াকেও দুষছেন তিনি। সুশান্ত দাবি করলেন, বাংলাদেশে আর একজনও প্রগতিশীল সাংবাদিক নেই, যিনি সত্যিটা সকলের সামনে তুলে ধরবেন। অবশ্য এমনটা করার যে সুযোগও নেই, তাও জানালেন সুশান্ত। কারণ সাংবাদিক চাইলেই কোনও খবর প্রকাশ পাবে না, তার জন্য সংবাদ দপ্তরের তথা সম্পাদকের মান্যতা প্রয়োজন। আর এখানেই যত গোল। সাংবাদিক আসল সত্যি সামনে তুলে ধরতে চাইলেও তা করতে দেওয়া হচ্ছে না। সুশান্তের অভিযোগ, বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদপত্রগুলিও গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে ইউনুসের গুণগান গাইছে, বা হয়তো এমনটা করতে বাধ্য থাকছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথাও শোনা গেল তাঁর মুখে। তবে স্রেফ হিন্দু নয়, একইসঙ্গে খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ সহ অনেকেই অত্যাচারিত হচ্ছেন বলে দাবি বাংলাদেশি সাংবাদিকের। এই পরিস্থিতির বদল না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। গোটা বিশ্বের নজর পড়ুক এই অশান্তির দিকে, এমনটাই চাইছেন সুশান্তরা। একইসঙ্গে তাদের পরামর্শ, বাংলাদেশে শান্তি ফেরানোর জন্য অবিলম্বে সরানো হোক ইউনুস সরকারকে।