শীতকাল মানেই নলেন গুড়ের পাটিসাপটা, পিঠে-পুলি, পায়েস, সন্দেশ, রসগোল্লা। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় নলেন গুড়প্রেমীদের রসনা তৃপ্তি কতটা কী পূরণ হবে সেই বিষয় যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিন্তু কেন?
পৌষ ও মাঘের সুন্দর মেলবন্ধনে হয় শীতকাল। আর শীতকাল মানেই নলেন গুড়ের পাটিসাপটা, পিঠে-পুলি, পায়েস, সন্দেশ, রসগোল্লা আরো কত কী! নলেন গুড় নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে মিষ্টি প্রেমীদের। তাই নলেন গুড় প্রেমীরা প্রত্যেক বছর অপেক্ষা করে থাকে, কখন শীতকাল আসবে আর কখন এক বাটি তরল নলেন গুড়ে একটা সিদ্ধ পিঠে ডুবিয়ে মুখে তুলবে। শীতকালে গ্রাম বাংলা ভ্রমণে এলেই চোখে পড়ে খেজুর গাছে ঝোলানো হাঁড়ি। শিউলিদের পেশা হল খেজুর রস সংগ্রহের জন্যে গাছে উঠে হাঁড়ি বাঁধা, পরেরদিন ভোরবেলা রস সংগ্রহ হয়ে গেলে গাছে থেকে হাঁড়ি নামিয়ে আনে। ভোরবেলার এই রসকে বলা হয় ‘জিরেন কাটা’ যার স্বাদ হল অতুলনীয়। সেই রসকে বাড়িতে নিয়ে এনে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা। প্রত্যেক বছর পূর্ব মেদিনী থেকে আগত শিউলিরা দুই থেকে নয় মাসের জন্যে হাওড়া জেলার আমতা, বাগনানসহ বেশকিছু জায়গায় বাসা বাঁধে। খেজুর রস সংগ্রহ করে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করার সময় শিউলিদের সাথ দেয় তাদের পরিবারের লোকজন। স্বাদ ও সুগন্ধের কারণে শীতের বাজারে খেজুর গুড়ের চাহিদা অনেক বেশি। তাই শিউলিদের ছাড়া নলেন বা পাটালি গুড় সম্বন্ধে কল্পনা করাটাই অসম্ভব।
কিন্তু এবারে নলেন গুড়প্রেমীদের রসনা তৃপ্তি কতটা কী পূরণ হবে সেই বিষয় যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণে এই বছর খেজুর রসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে গ্রাম বাংলায়। ডিসেম্বর প্রায় শেষের মুখে কিন্তু শীতের প্রকোপ কমের কারণে খেজুর রসের উৎপাদনও কম। ফলে মাথায় হাত সমস্ত শিউলিদের। নন্দীগ্রামের বাসিন্দা পেশায় যিনি শিউলি তিনি জানিয়েছে, আগেরবারের থেকেও এবারের পৌষে খেজুরের রস তুলনামূলক কম। তাই ভোরবেলায় সংগ্রহিত রস জ্বাল দিয়ে মোটে একটা হাঁড়ি গুড় তৈরি করতে পারা গেছে। যা আগেরবারের আয়ের তুলনায় অনেকটাই কম। তার ওপর খড়ের মূল্যবৃদ্ধি হয়ে চলেছে দিনের পর দিন। কম আয়ের ফলে শিউলির পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঢুকে যাচ্ছে অনেকই। এছাড়াও আগামী প্রজন্ম এই পেশাতে কতটা আগ্রহ দেখাবে সেই বিষয়ও যথেষ্ট সন্দেহ আছে শিউলিদের।
বছর বছর গুড়ের উৎপাদন কম হওয়ার ফলে শিউলি প্রায় লুপ্ত হয়ে যাবে এমনই আশঙ্কা করছে প্রবীণ শিউলিরা। আর এই আশঙ্কাই যদি ভবিষ্যতে গিয়ে সত্যি হয় তাহলে বাঙালিদের কাছে সেটা হবে দুঃখজনক।