বাবরি ধ্বংসের পর বন্ধ হয়েছিল। পুনরায় খুলল সেই শিবমন্দির। ঘটা করে আয়োজন হল পুজোর। আর সেখানেই দেখা গেল, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির ছবি। হিন্দুদের উৎসবে সামিল হলেন ভিনধর্মের অনেকেই। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিবমন্দির পুনরায় খুলছে। উৎসবের আমেজ এলাকায়। চলছে পুজো-পাঠ, যজ্ঞ। আয়োজন হয়েছে নাম-সংকীর্তনের। মন্দিরে হাজির এলাকার প্রায় সব হিন্দুরাই। তবে অনুষ্ঠান থেকে নিজেদের বিরত রাখেননি এলাকার মুসলিমরাও। হিন্দুদের শোভাযাত্রায় পুষ্পবৃষ্টি করে নজর কেড়েছেন তাঁরা।
ঘটনা সেই যোগীরাজ্যের। এমনিতে মন্দির-মসজিদে বিতর্কে এই রাজ্যের নাম হামেশাই সংবাদের শিরোনামে দেখা যায়। কখনও বিতর্ক এতটাই জটিল হয়ে ওঠে, তা সামলাতে হিমসিম খেতে হয় প্রসাশনকে। কিছু ঘটনায় শীর্ষ আদালত অবধি জল গড়িয়েছে। কখনও হিন্দু, কখনও মুসলিম, একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন দুই পক্ষ। তবে ব্যতিক্রমের ছবিও ধরা পড়ে। ঠিক যেমন, লুধাওয়ালার এই শিবমন্দিরে দেখা গেল। মন্দিরের বয়স নেহাতই কম নয়। তবে দীর্ঘদিন তার দরজা বন্ধ ছিল। তাও দৈব কারনে নয়, ভয় পেয়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ করেছিলেন ভক্তরাই। ভয়ের নেপথ্যে ১৯৯২ সালের বাবরি ধ্বংসের ঘটনা। এমনই এক ডিসেম্বরে অযোধ্যার বিতর্কিত মসজিদ রাতারাতি উধাও হয়ে যায়। দেশজুড়ে হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, পালটা অভিযোগে উত্তাল হয় গোটা দেশ। অশান্ত পরিস্থিতিতে কম রক্ত ঝড়েনি! তাই ভয় পাওয়া যে স্বাভাবিক ছিল, তা বলাই যায়। মূলত সাম্প্রদায়িক অশান্তি, তবে এর সঙ্গে রাজনৈতিক যোগের অভিযোগও তোলেন অনেকে। এই আবহে বেজায় ভয় পেয়ে যান লুধাওয়ালার ওই মন্দির চত্বরের হিন্দুরা। কারণ সেখানে তখন মুসলিমরাই সংখ্যায় বেশি ছিলেন। যদি বাবরি ধ্বংসের প্রভাব এলাকায় পড়ে, সেই ভয়ে আগেভাগেই চম্পট দেন ওই এলাকার অধিকাংশ হিন্দু পরিবার। আর যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যান মন্দিরের বিগ্রহ, শিবলিঙ্গ সবকিছু। তালা পড়ে মন্দিরের দরজায়। সেই থেকে এতদিন বন্ধই ছিল ওই শিবমন্দির।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে সবকিছুই। অযোধ্যার বিতর্কিত সেই জমিতে প্রতিষ্ঠা হয়েছে রামমন্দির। এবার দরজা খুলল লুধাওয়ালার ওই শিবমন্দিরেরও। পুনরায় মন্দিরের অন্দরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন এলাকার হিন্দুরা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনভর চলল প্রাণপ্রতিষ্ঠার উৎসব। আর সেখানি দেখা গেল বিরল দৃশ্য! একসময় যে মুসলিমদের ভয়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ করেছিলেন ওই এলাকার হিন্দুরা, সেই মুসলিমরাই এবার অংশ নিলেন মন্দির প্রতিষ্ঠার উৎসবে। সরাসরি না হলেও, হিন্দুদের শোভাযাত্রায় পুষ্পবৃষ্টি করে সম্প্রীতির পরিচয় দিয়েছেন তাঁরা। সংবাদ সংস্থার দাবি, এদিনের উৎসবে কোনও অশান্তির ঘটনা সামনে আসেনি। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে মন্দির প্রতিষ্ঠায় অংশ নিয়েছিলেন। আগামী দিনে এই মন্দিরে নিয়মিত পুজোর ব্যবস্থা হবে, এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসী। আর সেখানে অন্য সম্প্রদায়ের কারও আপত্তি থাকবে না বলেও তাঁদের স্থির বিশ্বাস।