কর্ণধারদের আর্থিক স্বার্থ জড়িয়ে থাকার দরুণ তাঁদের কাজের সময়ের ঠিক থাকে না। তাঁরা ঘড়িকে পাত্তা দেন না। কিন্তু সেই একই কাজ একজন কর্মী কেন করবেন? প্রশ্ন তুললেন নমিতা থাপর।
সপ্তাহে সত্তর ঘণ্টা কাজ। তাতেই উন্নতি দেশের। ইনফোসিস কর্তা নারায়ণমূর্তি এ প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকেই চলছে নানা আলোচনা। জমে উঠেছে বিতর্ক। ভারতীয় কর্মসংস্কৃতির আগামী রূপরেখা যে ঠিক কী হতে পারে, তার একটা আগাম আভাস যেন পাওয়া যাচ্ছে এই আলোচনা থেকেই। দেখা যাচ্ছে, বহু সংস্থার কর্তারাই নারায়ণমূর্তির সঙ্গে সহমত। তাঁদের মতে, দেশের তরুণ প্রজন্ম যদি এভাবে কর্মযজ্ঞে ঝাঁপ দেন, তাতে তাঁদের উন্নতি, আর দেশেরও। ভারতের মতো দেশের উন্নতির জন্য তা জরুরি, কারণ বিশ্বের মানচিত্রে অর্থনীতির নিরিখে নিজের জায়গা করে নিতে হলে শ্রমের বিনিয়োগ খুব জরুরি। আর সেই পুঁজি আছে দেশের তরুণদের হাতেই। তবে,সম্ভবত এই প্রথমবার একটি সংস্থার সিইও সরাসরি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেন। তিনি এমকিউর ফার্মাসিউটিক্যালস-এর সিইও নমিতা থাপর।
আরও শুনুন: বিয়ের নিমন্ত্রণেও জালিয়াতির ছক! সাবধান না হলেই ফাঁকা হবে অ্যাকাউন্ট
নমিতা কাজের সময় নয়, বরং প্রোডাক্টিভিটির ক্ষেত্রে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জোর দিয়েছেন বেশি। আর তাই নারায়ণমূর্তির প্রস্তাবের সঙ্গে তিনি সহমত পোষণ করেননি। সম্প্রতি একই ভাবে নারায়ণমূর্তির ভাবনার বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস নেতা কার্তি চিদম্বরমও। তাঁর মত, দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলেই যে কর্মীদের কাজের গুণ ভালো হবে তার কোনও মানে নেই। কাজের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের সঠিক ভারসাম্য থাকা জরুরি। তাতে কর্মীদের মন ভালো থাকবে। আর তার দরুনই কাজের মান ভালো হবে। একই সওয়াল নমিতারও। তবে এই চর্চা যত হচ্ছে, তত নতুন নতুন অভিমত সামনে আসছে। যেমন ‘সাদি ডট কম’ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অনুপম মিত্তালের মত, এই যে সত্তর ঘণ্টা কাজের কথা বলা হচ্ছে, তা আহামরি নতুন কিছু নয়। কাজের জীবনের শুরুতে তাঁকে যে ১৬ ঘণ্টার শিফটে কাজ করতে হয়েছে, তা উল্লেখ করেই তিনি এই নতুন ধারণার নতুনত্বকে নস্যাৎ করেছেন। তাঁর মত, হাইব্রিড মডেলে বরং কর্মীদের কাজের মান বাড়তে পারে। এই মডেলে, কর্মীরা অফিস এবং বাড়ি দুই জায়গাকেই কর্মক্ষেত্র হিসাবে বাছতে পারেন। আর তাই মিত্তালের মক্তব্য, কাজ আর জীবনের ভারসাম্য নয়, বরং কাজ আর জীবনের হারমনি বা সমন্বয় খুব জরুরি।
আরও শুনুন: ৮ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ, ২৫০ ভিডিও বানিয়েও মুছলেন ইউটিউবার, নতুন পেশা অশনিসংকেত?
নমিতা থাপর অবশ্য মিত্তালের এই মতকে আমলই দেননি। তাঁর মতে, সংস্থার কর্ণধার বা সিইও-দের এবং কর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ফারাক থাকবে। তাঁর তাই সাফ কথা, কর্ণধারদের আর্থিক স্বার্থ জড়িয়ে থাকার দরুণ তাঁদের কাজের সময়ের ঠিক থাকে না। তাঁরা ঘড়িকে পাত্তা দেন না। কিন্তু সেই একই কাজ একজন কর্মী কেন করবেন? তিনি নিজের উদাহরণ দিয়েই বলেছেন, নিজের সংস্থার জন্য তিনি সময়ের হিসাব ভুলেই কাজ করেন। তার দরুণ যে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার কথা, তা-ও পান। কিন্তু একজন কর্মী তা পান না, ফলত একই রকম মানসিকতা যে তাঁরও হবে, তা আশা করা যায় না। তিনিই সম্ভবত প্রথম, যিনি সংস্থার সিইও হয়েও নারায়ণমূর্তির মতের বিরোধিতা করলেন। নমিতা অনেকটাই জোর দিয়েছেন, কাজের সময় আর ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্যের উপর। কর্মীদের মানসিক সুস্বাস্থ্যের উপর।
ভবিষ্যৎ ভারতে দৈনিক কাজের সময় ঠিক কত ঘণ্টা হবে, তা এখনই নিশ্চিত জানা নেই। তবে এই আলোচনা জানাচ্ছে, শুধু প্রোডাক্টিভিটি নয়, কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথাটিও ভাবছেন অনেকে। এই ভাবনা যে ইতিবাচক, তা বলাই যায়।