নেটদুনিয়া থেকে উপার্জনের পথ খুলে যাওয়ায় কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের পেশা বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। যত দিন যাচ্ছে, প্রতিযোগিতা বাড়ছে সেখানেও। আর তার জেরেই নিত্যনতুন কন্টেন্ট ভাবতে হচ্ছে কিয়েটরদের। তবে সেই ভাবনা কি অনেক সময়ই স্বাভাবিকতাকে অতিক্রম করে যাচ্ছে?
উড়ছে টাকা। যে পারো সে ধরো। এই ছিল ‘খেলা’। এক ইনফ্লুয়েন্সারের কীর্তিতে রীতিমতো শোরগোল পড়েছিল নেটদুনিয়ায়। ভিডিও ভাইরাল। অতএব যা ভাবা হয়েছে তা পুরপুরি সফল। এই সমীকরণ কি এতটাই সরল? সাম্প্রতিক একটি ঘটনার গতিপ্রবাহ বলছে, মোটেও না। কেননা এই কীর্তির জন্যই গ্রেপ্তার হতে হয়েছে ভানুচন্দর বা ‘অ্যাঙ্কর চাঁদু’ নামে ওই ইনফ্লুয়েন্সারকে।
ঘটনা হায়দরাবাদের। সম্প্রতি একটি বিশেষ মানি হান্টের পরিকল্পনা করেন ওই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। দেখা যায়, ২০০ টাকার নোট তিনি রাস্তার পাশে উড়িয়ে দিচ্ছেন। পথচারীরা চাইলে সেই টাকা কুড়িয়ে নিতে পারেন। তবে সেটা যেন পথচারীদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। ঠিক ভিডিও গেমে যেমন চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয় অনেকটা সেরকমই। ক্রিয়েটর জানিয়েছিলেন, তিনি মোট কুড়ি হাজার টাকা লুকিয়ে রেখেছেন রাস্তারই আশেপাশে। এবং তা খোঁজার দায়িত্ব বাকিদের। মুহূর্তে সে ভিডিও ভাইরাল হয়। অর্থ নিয়ে এমন নয়ছয় করা যায় কি-না, সে প্রশ্নও ওঠে। তবে এই বিতর্কে লাভ হয় ক্রিয়েটরেরই। গোটা দেশে তিনি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ভিউ বা যে পরিচিতির জন্য এমন কন্টেন্টের দিকে ঝুঁকেছিলেন তিনি, সে উদ্দেশ্য সফল হয় তাঁর।
আরও শুনুন: ৮ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ, ২৫০ ভিডিও বানিয়েও মুছলেন ইউটিউবার, নতুন পেশা অশনিসংকেত?
তবে শেষমেশ হিতে বিপরীত হল। তাঁর এই ‘স্টান্ট’ অপরাধ হিসাবেই ধরা দিল পুলিশের চোখে। একে তো টাকা নিয়ে এমন খেলা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। দ্বিতীয়ত, জনবহুল রাস্তায় এমন মানি হান্টের প্ল্যান করার দরুন ট্রাফিক ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, এই ধরনের কাজ শুধু যে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তাই-ই নয়; সমাজের সামনে খুব খারাপ দৃষ্টান্তও তুলে ধরে। অতএব হাতকড়া পড়েছে ক্রিয়েটরের হাতে।
তবে তাতে কি লাগাম পড়বে ভাইরালের নেশায়? নেটদুনিয়া থেকে উপার্জনের পথ খুলে যাওয়ায় কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের পেশা বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। যত দিন যাচ্ছে, প্রতিযোগিতা বাড়ছে সেখানেও। আর তার জেরেই নিত্যনতুন কন্টেন্ট ভাবতে হচ্ছে কিয়েটরদের। তবে সেই ভাবনা কি অনেক সময়ই স্বাভাবিকতাকে অতিক্রম করে যাচ্ছে! ভাইরাল হওয়া বা অনেক ভিউ পাওয়ার নেশা কি ক্রমাগত ঝুঁকিবহুল কাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের? এ প্রশ্ন বারবারই ওঠে। এ নিয়ে চর্চা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে এবার এই ইনফ্লুয়েন্সারের গ্রেপ্তারি যেন বুঝিয়ে দিল, ভাইরাল হওয়ার লোভে যা ইচ্ছে তাই-ই করা যায় না। কোথাও একটা সীমারেখা বোধহয় থাকা উচিত। তবে, সেই সীমারেখা টানবে কে? সে প্রশ্ন অবশ্য তোলাই থাকল।