বাইক চালাতে চালাতে মাথায় আঘাত লাগে। পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান। তারপর আর কিছু মনে নেই। সংজ্ঞা ফিরতেই দেখেন, হাতের চারটে আঙুল নেই! শোরগোল পড়ে যায় চারদিকে। পুলিশের কাছেও বিষয়টা এইভাবেই দেখানো হয় যে, কেউ বা কারা ওই যুবকের হাতের আঙুল কেটে চম্পট দিয়েছে! কী হল তারপর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
তাজমহলের সৌন্দর্য নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। কিন্তু এই সৌধ ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। এই যেমন, তাজমহল তৈরির পর শিল্পীদের আঙুল কেটে নিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট। সত্যিই এমনটা হয়েছিল কি না, তা তর্কের বিষয়। কিন্তু সাম্প্রতিক এক ঘটনা মনে করিয়ে দিল এই আঙুল কেটে নেওয়ার প্রসঙ্গটি। প্রথমে অবশ্য বোঝা যায়নি, এর সঙ্গে আদৌ শিল্পী বা শ্রমিকের কোনও যোগ রয়েছে। ধীরে ধীরে সবটা সামনে আসে।
ঘটনা সুরাটের। গুজরাটের এই শহর হীরে ব্যবসার জন্য বিখ্যাত। দেশ তো বটেই, বিদেশেও এখান থেকে হীরে সরবরাহ করা হয়। শহরের অনেক বাসিন্দাই হীরের কাজের সঙ্গে যুক্ত। সবাই ব্যবসায়ী নন অবশ্যই, কেউ হীরের গয়না তৈরির কাজ করেন কেউ আবার অন্য কিছু। কিন্তু কাজের চাপ যে প্রত্যেকের তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এমনই এক হীরের দোকানে কাজ করতেন ময়ূর তারপারা। কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজ সামলাতে হত তাঁকে। দোকানের মালিক পরিবারের সদস্য। তাই বলে দোকানে বাড়তি সুবিধা পেতেন না ময়ূর। বরং নিত্যদিন কাজের চাপ বাড়ছিল। এদিকে পরিবারের সদস্যের দোকানে কাজ, তাই ছেড়ে যেতেও পারছিলেন না। সবমিলিয়ে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলেন। এমনই এক পরিস্থিতিতে অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হলেন ময়ূর। মাঝরাস্তায় বাইক থেকে পড়ে জ্ঞান হারালেন, আর উঠে দেখলেন হাতের চারটে আঙুল নেই। পুলিশের কাছেও এই নিয়ে নালিশ জানিয়েছিলেন। সন্দেহ, তাঁর আঙুল কেটে নেওয়া হয়েছে কালোজাদু করার উদ্দেশে। তদন্তে নামে পুলিশ। কিন্তু ধীরে ধীরে যে সত্যি সামনে আসে তার সঙ্গে বাস্তবের অর্থাৎ ময়ূরের অভিযোগের কার্যত কোনও মিল ছিল না।
ব্যাপারটা ঠিক কী?
তাহলে খুলেই বলা যাক! নিয়মমাফিক তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে যায় ঘটনাস্থলে। সেখানে দুর্ঘটনার কোনও চিহ্ন ছিল না। এমনকি ময়ূরের বাইক, টাকা পয়সা সবই অক্ষত ছিল। এখানেই শেষ নয়, আঙুল বাদ যাওয়ার ঘটনাটি ময়ূর যেভাবে ব্যাখ্যা করছিলেন তাতেও বেশ কিছু অসঙ্গতি ছিল। সবমিলিয়ে সন্দেহ হয় পুলিশের। তদন্তের স্বার্থেই ময়ূরকে জেরার জন্য ডেকে পাঠান তাঁরা। পুলিশি জেরায় সব সত্যি বলে ফেলেন ময়ূর। আসলে, পারিবারিক টানাপোড়েন, অতিরিক্ত কাজের চাপ, টাকা-পয়সার চিন্তায় বিগত কয়েকমাস ধরে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলেন ময়ূর। এদিকে ছেড়ে বেরোনোর কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাই নিজেই নিজের আঙুল কেটে ফেলেন, ভেবেছিলেন এমনটা করলে কাজে যেতে হবে না। ইচ্ছা করেই কালাজাদু বা অন্য কেউ আঙুল কেটে নিয়েছে এমন তত্ব্ব ছড়িয়ে দেন। এইভাবে সব সত্যি সামনে আসবে ভাবতে পারেননি। তবে বাস্তবে সেটাই হল। যদিও এই মুহূর্তে মহূর অসুস্থ। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।