হাজার নয়, লাখ নয়, একসঙ্গে স্নান সারবেন কয়েক কোটি ভক্ত। স্রেফ ভারত নয়, গোটা বিশ্বেই কুম্ভমেলাকে সবথেকে জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসব বলা যায়। ভিড়ের জন্য তো বটেই, এই মেলার ঐতিহাসিক গুরুত্বও নেহাতই কম নয়। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একবার ডুব দিলেই ধুয়ে যাবে সমস্ত পাপ। তাই ঠান্ডা যতই পড়ুক, মকর সংক্রান্তির দিনে গঙ্গাস্নান করতে ভোলেন না অনেকেই। তবে স্রেফ গঙ্গাস্নান করলে হবে না, ডুবতে হবে বিশেষ জায়গায় গিয়ে। একেবারে ঘড়ি ধরে মাহেন্দ্রক্ষণে গঙ্গাবক্ষে নিজেকে সমর্পন করতে পারলেই, আর চিন্তা থাকবে না।
এই বিশ্বাস কোনও একজনের নয়, বরং কোটি কোটি ভক্তের। তাইতো সীমানা পেরিয়ে ভারতে হাজির হন বিদেশের ভক্তরা। সকলেই যে সন্ন্যাসী এমন নয়, সাধারণ মানুষও একইসঙ্গে পুণ্যের টানে ছুট আসেন। কেউ কেউ প্রতিবছর, কেউ আবার স্রেফ বিশেষ ক্ষণে। আসলে, কুম্ভমেলার ধরন অনেক। সময়ের হিসাবে তা বদলায়, বাড়ে গুরুত্ব। অর্থাৎ প্রতিবছর যে মেলা হয় তা একেবারে সাধারণ, নাম মাঘ মেলা। কুম্ভ হিসেবে চিহ্নিত হয় যে মেলা তা হয় চার বছর অন্তর। এই মেলা দেশের সবজায়গায় হয় না। প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী ও নাসিকে এই চার জায়গা কুম্ভ মেলার জন্য প্রসিদ্ধ। পরের ধাপটি অর্ধকুম্ভ, বিরতি ৬ বছরের। এটিও প্রয়াগেই হয় মূলত। এরপর পূর্ণ কুম্ভ, ১২ বছর ছাড়া এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কুম্ভ গোত্রে এই মেলাই সবথেকে জনপ্রিয়। চলতি বছরটি মহা কুম্ভের, তাই সবর্ত্র এই নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী এই মেলা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। কোনওভাবেই যেন আয়োজনে খামতি না থাকে, তা আগেভাগে নিশ্চিত করতে চাইছে কেন্দ্র। তবে কুম্ভ মেলার তালিকায় পূর্ণ কুম্ভই যে শেষ, তা নয়। রয়েছে মহা কুম্ভ মেলা। এই মেলার ক্ষেত্রে বছরের পার্থক্য হয় ১৪৪ বছর। বলাই বাহুল্য, এই মেলা দেখার সৌভাগ্য একজীবনে হওয়া সম্ভব নয়। তাই মোটের উপর পূর্ণ কুম্ভ মেলাকেই সবথেকে জনপ্রিয় আর বিশেষ আখ্যা দিয়ে থাকেন সকলে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, এমন জনপ্রিয়তার আসল কারণ কী?
ধর্মীয় উৎসব তাই উৎস খুঁজতে পুরাণে চোখ রাখতে হয়। এক্ষেত্রে দেখা যাবে, কুম্ভের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সমুদ্র মন্থনের প্রসঙ্গ। পুরানের এই ঘটনার সঙ্গে কতই না কাহিনি জড়িয়ে! দেবী লক্ষ্মীর আবির্ভাব, দেবতা অসুরের যুদ্ধ, মহাদেবের বিষপান আরও কত কী! এইসব কাহিনির মধ্যেই কুম্ভমেলার ইতিহাস লুকিয়ে। পুরান বলছে, অমৃত নিয়ে দেবাসুরে যখন ভয়ঙ্কর যুদ্ধ বাধল, শ্রী বিষ্ণু গরূড়কে নির্দেশ দিলেন অমৃতের কুম্ভ নিয়ে উড়ে যাওয়ার। সেইমতো কুম্ভ আগলে আকাশপথে রওনা দিলেন পক্ষীরাজ। এইসময়ই নাকি কয়েক ফোঁটা অমৃত মাটিতে পড়ে, গুনে গুনে চার ফোঁটা। তবে অমৃতের ওই এক ফোঁটাই যথেষ্ট। তাই চার জায়গায় জন্ম নিল নদী। যা গঙ্গার সঙ্গেই মিশল। এবার অমৃত থেকে জন্ম নেওয়া নদী যে বিশেষ হবে তা বলাই বাহুল্য। সেই থেকেই অই চার নদী যা আসলে গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত, পবিত্র হিসেবে মানা হয়। আর যে চার জায়গায় অমৃতের ফোঁটা পড়েছিল, সেগুলি বিশেষ পবিত্র স্থান। প্রতিবছর এইসব স্থানেই ঘটা করে আয়োজন হয় কুম্ভের। মেলার ধরন যে সময়ের হিসাবে হয় তারও ব্যাখ্যা মেলে পুরানে। তবে এই চার জায়গায় কুম্ভ মেলায় স্নান করলে যে বিশেষ পুণ্য অর্জন হবে, তাতে দ্বিমত নেই। আর তাই সকলে ছুটে যান মেলায়, ভক্তিভরে পুণ্যস্নান সেরে আসেন।