যে অর্থে সিনেমা দর্শককে গভীরভাবে স্পর্শ করত, অন্তরে নাড়া পড়ত, সেখানে যেন খামতি থেকে যাচ্ছে। কারণ, লগ্নিকারীরা সকলেই সৃষ্টিশীল মানুষ নন। তাঁদের মতামত থাকতেই পারে, তবে তিনি লগ্নিকারী বলেই তাঁর মতামত চূড়ান্ত হতে পারে না। এই পরিসর না থাকলে সিনেমার শিল্পগত মান যে কমবে, সানির স্পষ্ট ইঙ্গিত সেদিকেই।
অর্থের উপর ভরসা না করে সিনেমার উপায় নেই। কেননা সিনেমা একক শিল্প নয়। যন্ত্র ও প্রযুক্তির উপর তার নির্ভরশীলতা অনেকখানি। ফলে অর্থ ছাড়া সিনেমার গতি নেই। আবার তা অনর্থও ডেকে আনতে পারে। যদি, যিনি অর্থ দিচ্ছেন তাঁর রুচি অনুযায়ী সিনেমার চরিত্র বদলাতে থাকে, তাহলে শিল্পের জন্য তা মোটেও সুখবর নয়। পুঁজির সঙ্গে রুচি না মিললে যথেষ্ট গোলমাল। সেই অসুখেই কি ইদানীং ভুগছে সিনে-ইন্ডাস্ট্রি? তর্ক উসকে দিলেন খোদ সানি দেওল।
বহুদিনের কেরিয়ার। তাতে উত্থান-পতন আছে যথেষ্ট। যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, সাফল্য স্পর্শ করেছেন, তেমন ব্যর্থতার অন্ধকার দিকও দেখেছেন। আবার সেখান থেকে কামব্যাক করেছেন সানি। ফলত সিনেদুনিয়ার হালহকিকত তাঁর কাছে স্পষ্ট। সিনেমাবাড়ির ছেলে হওয়ার দরুন, সিনেমা-শিল্পের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আগাগোড়াই নিবিড়। বলা যায়, সিনেমা এবং ব্যবসার গ্রাফটিকে তিনি হাতের তালুর মতোই চেনেন। সেই প্রেক্ষিত থেকেই যখন তিনি সিনেমার অন্দরমহল বিশ্লেষণ করতে বসেন, তখন তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
আরও শুনুন: বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে ‘পুষ্পা ২’! হিন্দু আবেগে সন্তর্পণে ঢেউ তুলেই এল দারুণ সাফল্য?
সিনেমা করতে যে টাকার দরকার, তা সানির থেকে ভালো আর কেই-বা জানেন? কর্পোরেট পুঁজির গ্রহণযোগ্যতা তাই তিনি অস্বীকার করছেন না। তবে, একই সঙ্গে ভেবে দেখার বিষয় যে, সিনেমার সৃষ্টিশীলতার দিকটি একই রকম থাকছে কি-না! রুচির প্রশ্নে সিনেমা কোথাও খাটো হয়ে যাচ্ছে না তো? কৌশলে সে প্রশ্ন জাগিয়ে দিয়েছেন সানি। তাঁর বক্তব্য, এখন আমরা অনেকেই পুরনো সিনেমা দেখি। দেখতে ভালোবাসি। পুরনো গান আজও গুনগুন করে গেয়ে উঠি। নতুন গান হিট হয়, তবে সে সব গানের কথা যেন কিছুদিন পর মনেই থাকে না। তাহলে মূল সমস্যাটা কোথায়? কেন দর্শকের মনের ঘরে হালফিলের সিনেমা পাকাপাকি ভাবে থাকছে না! সানি এই ভাবনার জায়গাটিই সম্প্রতি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে চেয়েছেন। এমন নয় যে, আগে সিনেমা বানাতে টাকার দরকার ছিল না। বা, সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্য নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না, এমনটাও নয়। সবই ছিল। আর সেই সিস্টেম মাথায় রেখেই সৃষ্টিশীলতার শীর্ষবিন্দু ছুঁয়ে ফেলতেন কলাকুশলীরা। সেই ভারসাম্য কি আজকাল নড়ে গিয়েছে? সানির ইঙ্গিত সেদিকেই। তাঁর মতে, সময় বদলেছে। দেশ বদলেছে। কর্পোরেট পুঁজির হাতে সিনেমার নিয়ন্ত্রণ গিয়েছে। তা মন্দ নয়। তবে, গুড় ঢাললেই যে সব জিনিস মিষ্টি হবে তার কোনও মানে নেই। সিনেমাকে সিনেমা হয়ে উঠতে হলে, সিদ্ধান্তের ভার সেই সব মানুষের উপরই ছাড়তে হবে, যাঁরা সিনেমা বোঝেন। যিনি লগ্নি করছেন তিনি নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কিন্তু যদি ক্ষমতার অপব্যবহারে লগ্নিকারী সংস্থা বা ব্যক্তি সিনেমার মৌলিক সৃষ্টিশীলতার জায়গায় হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে সিনেমার গুণমান ক্ষুণ্ণ হতে বাধ্য।
নতুন এই পরিমণ্ডলেই সিনেমার স্বাদ আকস্মিক বদলাতে শুরু করেছে, মনে করেন সানি। তা যে সব সময় অসফল, তা নয়। তবে এই যে রুচির সামগ্রিক পরিবর্তন তা সিনেমা জন্য সর্বদা স্বাস্থ্যকার হয়ে উঠছে না। যে অর্থে সিনেমা দর্শককে গভীরভাবে স্পর্শ করত, অন্তরে নাড়া পড়ত, সেখানে যেন খামতি থেকে যাচ্ছে। কারণ, লগ্নিকারীরা সকলেই সৃষ্টিশীল মানুষ নন। তাঁদের মতামত থাকতেই পারে, তবে তিনি লগ্নিকারী বলেই তাঁর মতামত চূড়ান্ত হতে পারে না। এই পরিসর না থাকলে সিনেমার শিল্পগত মান যে কমবে, সানির স্পষ্ট ইঙ্গিত সেদিকেই।
তবে, পরিবর্তন সময়ের ধর্ম। আর তাই তাঁর মত, সেই ধর্ম মেনেই পরিবর্তনের পথে হাঁটতে হবে ইন্ডাস্ট্রিকে। অর্থাৎ নতুন সিস্টেমের ভিতরই শিল্প এবং উৎকর্ষের পথ খুঁজে বের করতে হবে, এমনটাই মনে করছেন সানি দেওল।