কলের উপরে পানীয় জল লেখা থাকলেই যেমন সে জল চট করে খেতে যান না, তেমনই, প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার লেখা থাকলেই সে জল নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই। প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটারকে ‘হাই রিস্ক ফুড’-এর তালিকাতেই রাখছে FSSAI, অর্থাৎ Food Safety and Standards Authority of India।
বলি, একটু জল পাই কোথায় বলতে পারেন?
এই প্রশ্ন থেকে জলের খোঁজ যে কতদূর পর্যন্ত গড়িয়ে গিয়েছিল, সে গল্প বলেছে ‘অবাক জলপান’। অথচ পুকুরের জল, শিশিরের জল, কেওড়ার জল, গোলাপজল… এমন হাজার জলের খোঁজ মিললেও একটুখানি পানীয় জল পেতে সে একেবারে নাকের জলে চোখের জলে অবস্থা। আপনি বলবেন, এ তো নিছক গল্প। আজ্ঞে না, গল্পই বলুন কি বাস্তব, নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায় মুখে তোলা যায় এমন পানীয় জল পাওয়া কিন্তু মুখের কথা নয়। জলের অন্য নাম যে জীবন, সে কি আর সাধে বলেছে! আর জীবন নিয়ে কি ছেলেখেলা করা যায়! অতএব, জলের সেফটি নিয়ে নিশ্চিত হলে তবেই না সে জল খেয়ে নিজেকে মার্কড সেফ করবেন! আর সেই কথাটিই এবার মনে করিয়ে দিল খোদ খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর। সাফ বুঝিয়ে দিল, কলের উপরে পানীয় জল লেখা থাকলেই যেমন সে জল চট করে খেতে যান না, তেমনই, প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার লেখা থাকলেই সে জল নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই। প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটারকে ‘হাই রিস্ক ফুড’-এর তালিকাতেই রাখছে FSSAI, অর্থাৎ Food Safety and Standards Authority of India।
পৃথিবীর তিন ভাগ জল, এক ভাগ স্থল। শুধু এ দেশের কথাই যদি ধরি, এখানেও তো কম নদ-নদী-হ্রদ নেই। তবুও গোটা দেশেই অনেক জায়গাতেই পানীয় জল পাওয়া রীতিমতো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। একেবারে শহর মহানগর এলাকাতেও অনেকেই আজকাল রান্নায় ব্যবহার করার জল এবং খাওয়ার জল নিয়মিত কিনে নিতেই অভ্যস্ত। আর নইলে ভরসা ওয়াটার পিউরিফায়ার। কিন্তু সেই কেনা জলও কি নির্দ্বিধায় ভরসা করার যোগ্য? তা নয় বলেই, সম্প্রতি ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান নির্ধারণ সংস্থা FSSAI-এর নির্দেশ, এবার থেকে প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটারের মান নিয়মিত কড়া পরীক্ষা করতে হবে।
সাম্প্রতিক কালেই কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বোতল বা প্যাকেটবন্দি পানীয় জলের ক্ষেত্রে Bureau of Indian Standards বা BIS-এর শংসার আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারপর নয়া নির্দেশিকা জানিয়ে দিল, FSSAI-এর পরীক্ষায় পাশ না করলে লাইসেন্স মিলবে না পানীয় জল প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির। এর আগে BIS এবং FSSAI, দুই সংস্থার থেকেই সার্টিফিকেট পেতে হত সংস্থাগুলিকে। নতুন নিয়মে সেই জট রইল না বটে, তবে পানীয় জলের মান নিয়ে চিন্তা পুরোপুরি কাটল কি? যদিও ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটির দাবি, নতুন নিয়ম চালু হওয়ার ফলে ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্যের মান উন্নত করতে বাধ্য হবেন।
আসলে পুঁজির দুনিয়ায় তো সবই বাজারের পণ্য হয়ে যায়। সে মানুষ হোক কিংবা মানুষের স্বাস্থ্য। রমরমিয়ে বাজার বাড়ে কোনও বিশেষ খাবার, বিশেষ পণ্য, বিশেষ জিনিসের। তার কোয়ালিটি কন্ট্রোল হল কি হল না, সে প্রশ্নও ভেসে যায় বাজারের ঢেউয়ে। শুধুমাত্র সিলড বোতলে জল খাচ্ছেন ভেবেই যে তাই নিশ্চিন্ত হওয়ার জো নেই, সে কথা নতুন করে মনে করিয়ে দিল দেশের খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর।